মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুরে সরকার ঘোষিত বর্ধিত বেতনের দাবিতে উত্তরা স্পিনিং মিলস লিমিটেড-এর শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
বুধবার, ১০ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে শ্রমিকরা মিলের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। অবরোধ প্রায় ৫০ মিনিট স্থায়ী হয়। এসময় টাঙ্গাইলের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
দুপুর আড়াইটার দিকে মির্জাপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এস এম মনসুর মুসা ও মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। বেলা তিনটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকার উত্তরা স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানায় ৯৫০ জন শ্রমিক কর্মরত আছেন। তারা তিন শিফটে কারখানায় কাজ করে থাকেন। কারখানায় কর্মরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিজিএমইএ আর টেক্সটাইলস শ্রমিকরা বিকেএমইএ এর অধীনে। সম্প্রতি সরকার কারখানার শ্রমিকদের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারন করে বর্ধিত বেতনের ঘোষণা দেয়। গার্মেন্টস শ্রমিকরা ডিসেম্বর থেকেই বর্ধিত বেতন পেলেও টেক্সটাইলে তা দেওয়া হয়নি। তারা আরও জানান, বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইল শ্রমিকদের নতুন বেতন ছাড়ের নির্দেশনা না দেওয়ায় শ্রমিকরা পুরানো হিসেবেই ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন।
উত্তরা স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শ্রমিক বাসন্তী রানী জানান, তিনি ১৩ বছর আগে দুই হাজার টাকা বেতনে এই কারখানায় যোগদান করেন। এখন তার বেতন সাত হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে সাত হাজার টাকায় সংসার চালানো খুবই কঠিন।
একই কারখানার আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ২০ বছর আগে থেকে একই কারখানায় কাজ করছেন। তার বেতন সাত হাজার ২০০ টাকা। ঘর ভাড়া দিতে হয় চার হাজার টাকা। বাকি ৩২০০ টাকা দিয়ে কিভাবে একটি সংসার পুরো মাস চলে।
কারখানার রিং অপারেটর রাব্বি ইসলাম জানান, চার হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। চার হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয় তাকে। বাকি চার হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে কিভাবে একটি পরিবারের মাস চলতে পারে। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ তো আছেই।
কারখানার শ্রমিক শিরিন আক্তার, এনামুল, কিরান চন্দ্র রায় ও সুজিত রায় জানান, এই কারখানায় অতিরিক্ত কাজের কোনো সুযোগ নাই। সরকারের নির্দেশে কারখানা বন্ধ থাকলেও সেই কাজ পরবর্তী সময়ে করিয়ে নেন। কিন্তু সেই বর্ধিত কাজের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। সরকার ১২ হাজার ৫০০ টাকা শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করলেও কারখানার মালিক আমাদের সেই বেতন দিচ্ছেন না। সরকারের কাছে আমাদের বর্ধিত বেতন বাস্তবায়নের দাবি জানাই।
সিবিএ নেতা মাহবুবুল আলম খান বিল্টু জানান, বিজিএমইএ শ্রমিকদের বর্ধিত বেতন ছাড় দিলেও বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইলস শ্রমিকদের বর্ধিত বেতনের কোন নির্দেশনা দেননি।
দেওহাটা ফাঁড়ির পরিদর্শক হাবিবুর রহমান জানান, শ্রমিকরা বর্ধিত বেতনের দাবিতে মহাসড়কে এসে অবরোধ সৃষ্টি করে। অবরোধের ৫০ মিনিট পর দুপুর তিনটার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
উত্তরা স্পিনিং মিলস লি: এর প্রজেক্ট পরিচালক বিধান সরকার জানান, শ্রমিকরা সরকারের বর্ধিত বেতনের ঘোষণা না বুঝেই আন্দোলন করছেন। সারাদেশে প্রায় ৫৭ লাখ শ্রমিক গার্মেন্ট এ কাজ করছেন। তাদের বেতন বর্ধিত হয়েছে। বিকেএমইএ থেকে টেক্সটাইলস শ্রমিকদের বেতন বর্ধিত করার নির্দেশনা না পাওয়ায় বর্ধিত বেতন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি শ্রমিকদের বুঝানোর চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।