মির্জাপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী খান আহমেদ শুভ এগিয়ে আছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিক ছেড়ে স্বতন্ত্র ট্রাক প্রতিকে চড়ে বসেছেন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। উপজেলার পদধারী অধিকাংশ নেতারা দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে এক রকম ঝুঁকিতে পড়লেও শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থীর বিজয় হবে বলে জানা গেছে।
মির্জাপুর আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান আহমেদ শুভ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু। তিনি তিনবার উপজেলা পরিষদ ও পাঁচবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন হাফ ডজন নেতা। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু দলীয় মনোনয়ন না চাইলেও তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ছাড়া অন্য যে কেউ মনোনয়ন পেলে তিনি তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। আর যদি বর্তমান সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেবেন। সে হিসেবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটির সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্তসহ ৪০জনেরও বেশি নেতা মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর ট্রাক প্রতীকের জন্য কাজ করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দলীয় হাই কমান্ডের ‘নো অ্যাকশন’ পলিসির কারণে ট্রাকের প্রচারে আরোও নেমেছেন পৌরসভার মেয়র সালমা আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মীর্জা শামীমা আক্তার শিফা, ভাইস চেয়ারম্যান আজাহারুল ইসলাম, সাতজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ অধিকাংশ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজ দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের একাংশ, সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মনি, শহীদুর রহমান শহীদ, হিতেশ চন্দ্র পুলকসহ বেশ কিছু সাবেক জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা নৌকা প্রতীকের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, মির্জাপুর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা কর্মী, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ ভোটাররা এক হয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর পক্ষে। তারা ট্রাক মার্কা বিজয়ী করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। তার দাবি, যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে, তাহলে ট্রাক মার্কার বিজয় সুনিশ্চিত।
আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার নির্বাচন সমন্বয়কারী মোশাররফ হোসেন মনি বলেন, সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ উপনির্বাচনে এমপি হয়েছেন প্রায় দেড় বছর আগে। এরই মধ্যে তিনি মানুষের মন জয় করেছেন। এবার তিনি এমপি হলে মির্জাপুরের কিছু নেতা তাঁর জনপ্রিয়তার ধারে কাছে আসতে পারবেন না। তাই প্রতিহিংসার কারণে কিছু নেতা-কর্মী খান আহমেদ শুভর বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। আর যেসব আওয়ামী লীগ নেতা নৌকা ফেলে ট্রাকে উঠেছেন, তারা লোভে পড়ে নৌকার বিপক্ষে নেমেছেন। তবে তাদের বাধা নৌকার বিজয় ঠেকাতে পারবে না।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল-৭ সংসদীয় আসন একটি উপজেলা, পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫২। এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন গোলাম নওজব চৌধুরী (হাতুড়ি), আরমান হোসেন তালুকদার (গামছা), জহিরুল ইসলাম জহির (লাঙ্গল), মঞ্জুর রহমান মজনু (মশাল), মোক্তার হোসেন (গোলাপ ফুল) ও রুপা রায় চৌধুরী (ডাব)।