ভূঞাপুর প্রতিনিধি: আজ ১৭ নভেম্বর শুক্রবার ভূঞাপুর গণহত্যা দিবস। ভূঞাপুরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেক দেশ প্রেমিকদের গণকবর থাকলেও সেগুলো অযত্ম অবহেলায় পড়ে আছে। প্রতিবছর বিজয়ের মাসে উপজেলা প্রশাসন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করলেও সারাবছর তাদের স্মৃতি কেউ মনে রাখেন না। এ কারণে স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫২ বছরেও সনাক্ত ও সংরক্ষণ করা হয়নি গণকবরগুলো।
ভূঞাপুরে ৪৭ জন শহীদের ১২টি গণকবর থাকলেও একটি গণকবরেরও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর ছাব্বিশা গ্রামে পাকসেনারা আক্রমণ করে পুরো গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবং গণহত্যা চালায়। এ গ্রামে ৭টি গণকবরে ৩৮ জন শহীদ, ভূঞাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২টি গণকবরে ৪ জন শহীদ ও ভূঞাপুর লৌহজং নদীরতীর সংলগ্ন বালুচরে ৩টি গণকবরে ৫ জন শহীদের তথ্য পাওয়া গেছে।
ভারই গ্রামের আব্দুল বারী মিঞা ও পূর্ব ভূঞাপুরের ওস্তাদ ক্ষেত্র মোহন বসাক নামের ২ জন বুদ্ধিজীবীসহ সম্মুখ যুদ্ধে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া ১৫ জন বীরাঙ্গণার কেউই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি বলে জানা যায়। এরমধ্যে ছাব্বিশা গ্রামে ৮ জন, বামনহাটা গ্রামে ৩ জন, পূর্ব ভূঞাপুর গ্রামে ৪ জন বীরাঙ্গণা রয়েছে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ কেউ পরবর্তীতে লাজ-লজ্জার ভয়ে ভারতে চলে যায়। এছাড়া ভূঞাপুরে প্রায় অর্ধশত লাঞ্চিত মা বোনদের অনেকেই চক্ষুলজ্জার ভয়ে বিষয়টি আড়াল করেন।
টাঙ্গাইলে ‘মহাবীর’ খেতাবপ্রাপ্ত ৩ জন বুদ্ধিজীবীর মধ্যে ভূঞাপুরের ২ জন, আব্দুল কদ্দুস ও নজরুল ইসলাম বাকু। টাঙ্গালের শহীদ সালাউদ্দিনের নামে ঘাটাইল ‘শহীদ সালাউদ্দিন সেনানিবাস’ নামকরণ করা হলেও ভূঞাপুরের ২ জন শহীদ আব্দুল কদ্দুস ও নজরুল ইসলাম বাকুর নামে কোনো প্রতিষ্ঠান, শহর, বাজার বা রাস্তার নামকরণও করা হয়নি।
স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদ বিভিন্ন সময়ে শহীদ আব্দুল কদ্দুস ও শহীদ নজরুল ইসলাম বাকুর নামে সরকারিভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাস্তার নামকরণের আবেদন করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুসেতু এলাকায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনের (ইপিজেট) নামকরণের দাবী জানায় ভূঞাপুর মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদ। মুক্তিযুদ্ধে ভূঞাপুরে ৩ জন কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খন্দকার হাবিবুর রহমান, আসাদুজ্জামান আরজু ও আব্দুল কদ্দুস। এরমধ্যে ৮ অক্টোবর আব্দুল কদ্দুস সম্মুখ সমরে শহীদ হন। ভূঞাপুরবাসী গণকবরগুলো সনাক্ত, সংরক্ষণ এবং মহাবীর খেতাবপ্রাপ্তদের নামে প্রতিষ্ঠান বা রাস্তার নামকরণের দাবী জানান।