নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলার সর্বত্রই কৃষকরা চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেক কৃষক এসব সবজি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানায়, গত বছর জেলার ১২টি উপজেলায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৫’শ হেক্টর। চলতি বছরে জেলায় সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮’শ হেক্টর। তবে এ পর্যন্ত ৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে।
জানা যায়, গত বছর জেলায় প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছিল। এসব সবজি বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হয়েছিল। এ কারণে এ বছর শীত শুরুর অনেক আগেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, শিম, টমেটো, বেগুন, লাউসহ শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে কোথাও কৃষকরা জমিতে সবজির চারা রোপন করছেন; কোথাওবা আবার নতুন গাছে আসা সবজির পরিচর্যা করছেন। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। শীতকালীন সবজির সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা করা গেলে কৃষকরা আরও লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সকলেই।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত বিঘা জুড়ে শীতের হরেক রকম সবজি চাষ করছে কৃষকরা। এর মধ্যে মুলা, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটল, শিম, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, গাজর, লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাকসহ শীতকালীন নানা রকমের শাক-সবজি।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাজারে সবজির দামও বেশি। ভালো দাম পাওয়ায় শীতকালীন সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। বিভিন্ন উপজেলাতে প্রকল্পভিত্তিক চাষ হচ্ছে এই সব সবজি।
কৃষকরা জানান, পুরো শীতের সময়েই বাজারে শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে। এ কারণে তারা শীত শুরু হওয়ার আগেই শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু করে দিয়েছেন। তারা বরাবরই শাক-সবজি চাষ করে আসছেন। এতে তারা সফলও হয়েছেন।
ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি এলাকার কৃষক আব্দুল করিম মিয়া জানান, আমরা সবজি চাষে এখন স্বাবলম্বী হয়েছি। এরকম চাষের ফলে আমাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। এখন আমাদের শাক-সবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না। সবজি খেত থেকেই পাইকাররা ন্যায্য দামে কিনে নিয়ে যায়। আর সবজির দামও ভালো পাওয়া যায়।
একই এলাকার কৃষক শামছুল আলম বলেন, সবজি চাষের জন্য খুব বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। এছাড়া, এজন্য তুলনামূলকভাবে মূলধনও কম লাগে। পরিশ্রমও অনেক কম। তবে সেবায় ত্রুটি করা যাবে না। কম সময়েই সবজি বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। প্রায় দিনই বাজারে সবজি বিক্রি করা যায়।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী গ্রামের কৃষক স্বপন মিয়া বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। দাম ভালো পেলে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে। এখন পরিচর্যা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। এই সবজি বিক্রি করে আমার সংসার ভালোভাবে চালাতে পারছি। কৃষি বিভাগ থেকে যদি আরও সহযোগিতা করে তাহলে সামনের বছর আরও এক বিঘা জমিতে সবজি চাষ বাড়িয়ে দিবো।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফারহানুল কবির বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি সব সময় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা আগাম বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। আগাম শীতকালীন সবজিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা-মাকড় ও ছত্রাকের আক্রমণ হয়ে থাকে। আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মো. দুলালউদ্দিন বলেন, জেলায় এবার আগাম শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শাক-সবজির আবাদ কিভাবে বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রযুক্তি সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।