ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুরে সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখার গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও টাঙ্গাইল প্রিন্সিপাল কার্যালয় হতে আলাদা আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আত্মসাতের এসব টাকা শাখা ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম তার ভাই, বন্ধুর শাশুড়িসহ একাধিক একাউন্টের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম ম্যানেজার হিসেবে সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখায় ২০২০ সালে যোগদান করে। এরপর দীর্ঘ ৩ বছর ২ মাস কাজ করেন সেখানে। এই দীর্ঘ সময়ে তথ্য প্রযুক্তিতে মেধাসম্পন্ন শহিদুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংকের ১৩০ জনের সঞ্চয়পত্রের টাকা লুজ চেকের (জরুরী উত্তোলনের জন্য একক পাতা) মাধ্যমে অন্য একাউন্টে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা সরিয়েছেন। এছাড়া উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের হত দরিদ্রদের ভাতার ৬ লাখ ৮১ টাকাও গায়েব করা হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম তার বড় ভাই ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামের মহিরউদ্দিনের তালুকদার এগ্রো ফার্ম ও কালিহাতি উপজেলার আদাবাড়ি গ্রামের খালেদা বেগম নামে পলাশ এগ্রো ফার্মের একাউন্টসহ তার বন্ধু বান্ধবদের একাউন্টের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেন।
খালেদা বেগমের মেয়ের জামাই পটুয়াখালী জেলায় দুদকের উপ-পরিচালক মামুন চৌধুরীর সাথে শহিদুল ইসলামের বন্ধুত্বের কারণে ওই হিসাব নম্বর ব্যবহার করে টাকা সরানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গোবিন্দাসী শাখা হতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী গ্রাহক উপজেলার কয়েরা গ্রামের মর্জিনা জানান, মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্য জমিজমা বিক্রি ও অন্যান্য মিলিয়ে ২১ লাখ টাকা ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে লভ্যাংশ তুলতে গিয়ে দেখি সঞ্চয়পত্রে টাকাই জমা হয়নি। ব্যাংক ম্যানেজার কৌশলে অনেক গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেফালী বেগম জানান, রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে কি করবো আমরা। কয়েক মাস লাভের টাকা তুলেছিলাম। ম্যানেজার শহিদুলকে বদলি করার পর ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি আমার সঞ্চয়পত্রই খোলা হয়নি। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
তালুকদার এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মহির উদ্দিন বলেন, ব্যাংকে একাউন্ট করার পর ৭ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ঋণের টাকাসহ জমি বন্ধক রেখে ভাইকে (শহিদুল) আরও দুই লাখ টাকা দিয়েছি। একাউন্টে কয় টাকা আছে বা নেই আমি কিছুই জানিনা। চেকের পাতাগুলোতে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিল সে।
পলাশ এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী খালেদা বেগম বলেন, একাউন্টের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কত টাকা আছে বা নাই। মেয়ের জামাই মামুন চৌধুরীই একাউন্টে লেনদেন করতো তার লোকজন দিয়ে। ব্যাংক ম্যানেজার শহিদুল তার বন্ধু ছিল। তাই গোবিন্দাসী শাখায় একাউন্ট খোলা হয়েছিল। ঝামেলার কারণে দেড় মাস আগে একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।
পটুয়াখালী জেলার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মামুন চৌধুরী বলেন, শহিদুলের সাথে ঢাকায় পড়াশুনার সুযোগে পরিচয় হয় তাঁর। পরিচিত হওয়ায় তার ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়েছে শাশুড়ির নামে। বিভিন্ন সময় ব্যাংকে লেনদেন করা হয়েছে। শাশুড়ির একাউন্টেতো নগদ টাকা জমা দেয়া হয়েছে কিন্তু সেখানে যদি ম্যানেজার অন্য একাউন্ট থেকে টাকা তার একাউন্টে জমা দিয়ে উত্তোলন করে তাহলে কিছু করার নেই।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ম্যানেজারের আইডি হ্যাক করে ব্যাংকের লোকজন টাকাগুলো আত্মসাৎ করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে বদলি করার পর আমার আইডি ব্যবহার করে টাকা সরানো হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্রগুলো ব্যাংকের পিয়ন লাভলুর বাড়িতে পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া এখনও গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখার বর্তমান ম্যানেজার ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, যেহেতু তদন্ত হচ্ছে সেহেতু এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না। প্রতিদিনই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ব্যাংকে ভিড় করছেন টাকা ফিরতের জন্য।
সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস ঘাটাইলের ডিজিএম আব্দুল্লাহ ফয়সাল বলেন, গ্রাহকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই; দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা টাকা ফেরত পাবেন। গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম দোষ স্বীকার করায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান কার্যালয় তদন্ত করছে। অন্যদিকে দুদকেও একটি মামলা হয়েছে।