নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে বৃত্তি প্রদানের নামে অর্থ বাণিজ্যে জড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি- ২০২৩’ জেলা শাখা টাঙ্গাইলের নাম ব্যবহার করে একটি চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা শাখা এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সভাপতি মোঃ সহিদুর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক মুহা. সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি ২০২৩-এর সভাপতি ঘাটাইলের চানতারা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলার আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারুনার রশিদ। আগামী ৪ নভেম্বর শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দেড় ঘন্টার উপজেলা ভিত্তিক বৃত্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা রয়েছে। বাংলা-৩০, ইংরেজি ৩০, গনিত ৩০ ও সাধারণ জ্ঞান ১০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হবে। এ পরীক্ষার সমন্বয়কারী কালিহাতীর হাসরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সদর রফিকুল ইসলাম তালুকদার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সদর উপজেলার আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারুনার রশিদ ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাসাইলের বার্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মনির হোসেন খান ।
আবেদন জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর। ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত আবেদনের মূল্য ১৫০ টাকা। পরীক্ষায় উপস্থিত শতকরা ৮ ভাগ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। জেলা টেলেন্টপুল শতকরা এক ভাগ ও উপজেলা টেলেন্টপুল শতকরা দুই ভাগ ও সাধারণ গ্রেডে শতকরা পাঁচ ভাগ বৃত্তি প্রদার করার কথা রয়েছে। জেলা প্রতি শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গোল্ড মেডেল ও সনদ প্রদান করা হবে। টেলেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। পরীক্ষা শেষে তিন দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
গত ৮ আগস্ট সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড আর কোচিং নির্ভর পড়াশোনা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন ক্লাসেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে এ বছর প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তির আয়োজন করেছে। আবার বেইআইনীভাবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার নাম ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হারুনার রশিদ বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। আমরা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাই নাই। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই আয়োজন করা হয়েছে।
দেড় ঘন্টায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে কিনা এমন প্রশ্নে হারুনার রশিদ জানান, আমরা তাদের একটু যাচাই করবো। তিনি আরও বলেন, আমরা কোন সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে এ আয়োজন করিনি। উল্টো যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা আমাদের সংগঠনের নাম ভাঙায়। আমরা নির্বাচিত কমিটি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহা. সাজ্জাদুর রহমান খোশনবীশ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষক সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র নাম ভাঙিয়ে এহেন অপকর্মের তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা শাখা এ সকল অর্থলোভী, ধান্ধাবাজদের সম্পর্কে সকলকে সাবধান ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি জেলা শাখার সভাপতি মোঃ সহিদুর রহমান খান বলেন, শিক্ষক হয়ে তারা অনৈতিক কাজ করছে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।