ভূঞাপুর প্রতিনিধি: যমুনা নদীর পতিত চরাঞ্চলকে ঘিরে কৃষক ও প্রাণিসম্পদের নতুন সম্ভাবনার এক দুয়ার খুলে গেছে। যমুনার বুকে ঘাস চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। জেলার গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার অংশে জেগে ওঠা যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের পাকচং, নেপিয়ারসহ দেশীয় বিভিন্ন জাতের ঘাস। এতে গবাদিপশুর খাদ্য ও পুষ্টিচাহিদা মিটার পাশাপাশি রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যগ্রহণ ছাড়াই হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে গরু, ছাগলসহ অন্য গবাদিপশু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার তীরবর্তী গোপালপুর উপজেলার নলিন ও সোনামুই বাজারে বিক্রির জন্য প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘাস নিয়ে আসেন বিভিন্ন চরের শতাধিক ঘাসচাষি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এখানে প্রতিদিন দুই টন ঘাস কেনাবেচা হয়।
দুর্গম চর এলাকা থেকে যারা নৌকায় ঘাস নিয়ে আসেন, তারা সময়মতো নৌকায় ফেরত যেতে পাইকারের কাছে ঘাস বিক্রি করে চলে যান। যমুনা তীরবর্তী নলিন, সোনামুই, শাখারিয়া ও জগৎপুরাসহ অন্যান্য গ্রামের অনেক কৃষক যমুনায় ঘাস চাষ করে এবং বাজারে বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করেন। প্রতি আঁটি পাকচং, নেপিয়ার ঘাস বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকায় এবং দেশীয় জাতের ঘাস বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
কৃষকের দেয়া তথ্যানুযায়ী, যমুনার উঁচু চরে ঘাস চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তীব্র শীতের তিন মাস ফলন কম হয়। প্রতি সাইকেল ঘাস চাষে সার, সেচ ও অন্যান্য খরচ হয় বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা এবং বিক্রি করে আসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। দেড় মাস পরপর ঘাস কেটে বিক্রির উপযোগী হয় বলে জানান কৃষকরা।
জগৎপুরা গ্রামের মমিনুল ইসলাম বিক্রি করছিলেন স্থানীয়ভাবে সুতা ঘাস নামে পরিচিত দেশীয় জাতের ঘাস। তিনি জানান, এগুলো চাষে কোনো খরচ হয় না, চরে বীজ বুনে রাখলেই হয়। এগুলোর আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি হয়, ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য এটি মানুষ কিনে নিয়ে যায়।
যমুনা তীরবর্তী শাখারিয়া গ্রামের ঘাসচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, যমুনার চরে আট বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে, খরচ বাদে বিঘাপ্রতি সাত-আট হাজার টাকার বিক্রি হয়। এতে ভালো লাভ থাকে। বছরে ৯ বার ঘাস কাটা যায়।
জগৎপুরা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি চরে দুই বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছি। ফলন ভালো হওয়ায় অর্থ আয়ও হবে ভালো।
ঘাস ক্রেতা নলিন গ্রামের মাহবুব আলম জানান, নলিন বাজার থেকে ঘাস কিনে প্রতিদিন দুটো গরু লালন-পালন করছেন। এতে অনেক উপকৃত হচ্ছেন তিনি। খড় কিনতে হচ্ছে না, ভুসি ও খাদ্য ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শরিফ আব্দুল বাসেত বলেন, চরাঞ্চলে উৎপাদিত পাকচং, নেপিয়ার, ভুট্টা ঘাস নলিন ও সোনামুই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এটি চরাঞ্চলের প্রাণিসম্পদের জন্য একটি শুভকর ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পাশাপাশি কৃষকরা গৃহপালিত পশুপাখি লালন-পালন করে লাভবান হচ্ছেন।