বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চোরাকারবারি চলার অভিযোগ

অপরাধ অর্থনীতি কালিহাতী টাঙ্গাইল সদর

সুলতান কবির: বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে জোকারচর পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের মাধ্যমে চোরাকারবারি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চোরাই চক্রটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে এই চোরাই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

 

 

অভিযোগে স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের এলেঙ্গা, চরভাবলা, আনালিয়াবাড়ী, সল্লা, জোকারচরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাক, বাস, লরিসহ বিভিন্ন পরিবহনে আনা চোরাই মালামাল লোড-আনলোড ও ক্রয়-বিক্রয়ের নিরাপদ পয়েন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছেন এই সিন্ডিকেটটি। প্রতিদিন সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ওই সকল পয়েন্টে চলে এইসব চোরাই মাল লোড আন-লোড ও ক্রয় বিক্রয় করা হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা আরো জানান, চক্রটি মালামাল গুদামজাত করার জন্য চরভাবলা, জোকারচর ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পারের ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশন এলাকায় বেশ কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে গোডাউন হিসাবে ব্যবহার করে দেদারছে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তারা বিভিন্ন ট্রাক, বাস, ট্রাক-লরিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রড, স্টীল সীট, কেরোসিন, গম, ভুট্টা, আদা-রসুন, জিরা, এলাচি, লংসহ মশলা জাতীয় পণ্য, ভারতীয় শাড়ী এমনকি বিভিন্ন নেশা জাতীয় পণ্যের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, এলেঙ্গা পৌরসভার চরভাবলা এলাকার শহিদুল ইসলাম শান্ত নামের একজন সরকারি কর্মচারী জোকারচর গ্রামের মোঃ রমজান আলী ও শান্তর বড় ভাই মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফসহ চরভাবলার প্রভাবশালী ৮-৯ জন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ওই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছেন একজন প্রভাবশালী সরকারি দলের স্থানীয় এক নেতা। ওই রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন যাবত নির্বিঘ্নে চোরাই মালের ব্যবসা করে অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন এই চক্রটি।

সূত্রটি জানায়, প্রতিটি পয়েন্টে তাদের দশ থেকে বারজন শ্রমিক রাতভর বিভিন্ন পরিবহনে আসা চোরাই মালামাল লোড -আনলোড করে স্থানান্তর ও গুদামজাত করে থাকেন। বিভিন্ন পরিবহনের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তারা নির্ধারিত পয়েন্টে মাল আনলোড ও মূল্য পরিশোধ করে থাকেন।

চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। গোপনে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেও এর কোন প্রতিকার হয় না বলেও সূত্র জানায়। এমনকি ওই চোরাই ব্যবসা সম্পর্কে একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সংবাদও প্রকাশ হলেও ওই সিন্ডিকেটের কিছু হয় না। চোরাই ব্যবসার আধিপত্য ও ভাগবাটোয়ারা নিয়েও ইতোপূর্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় নেতা শহিদুল ইসলাম শান্ত কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাশালী নেতার পৃষ্টপোষক হওয়ায় তিনি মাসে দু’একদিন অফিস করেন। কর্মস্থলে না গিয়ে শুধু মাত্র হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে পুরো মাসের বেতন-ভাতা গ্রহন করেন বলেও তার বিরুদ্ধে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। সরকারি অফিসের কাজ বাদ রেখে তাকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে দেখা যায়; যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দৃশ্যমান।

এ সকল অভিযোগ প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম শান্তর নিকট মুঠোফেনে জানতে চাইলে চোরাই মাল বিক্রির সাথে তিনি জড়িত নন বলে জানান। অফিস না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেয়।

বঙ্গবন্ধুসেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর আশরাফ জানান, তিনি এই থানায় নতুন এসেছেন। তাই এই চোরাই কারবারিদের সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *