নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, যতই শক্তিশালী দেশ হোক না কেন, তারা কোনোভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কোনো দেশের কোনো রকম হস্তক্ষেপ আমরা মেনে নেব না। আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলো নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে। তাদের মনে রাখতে হবে, দেশের জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসতে হবে। কাজেই বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মেলাক, আমি মনে করি এ দেশের মানুষ তা মোকাবেলা করবে। নির্বাচন ছাড়া ষড়যন্ত্র করে বা চোরাগলি পথে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণের সমর্থন। জনগণ এই দেশের মালিক। জনগণের সমর্থন থাকলে বিদেশি শক্তি আমাদের ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। বিএনপি একটানা আন্দোলন সংগ্রাম করছে। একই দাবি নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করেছে। শেখ হাসিনা পালাবার পথ পাবে না- এই একই কথা বারবার বলছে।
বিএনপি বলে, শেখ হাসিনার পতন না হলে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে তাদের ২০১৩ সালের পরিণতি হবে। যারা নির্বাচন বয়কট করতে চান, তারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতায় ছিলেন। অনেক অন্যায়, অত্যাচার করেছেন দেশের জনগণকে। সেসময় এদেশে গণতন্ত্র ছিল বিপন্ন। সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধি, কিছু লবিষ্ট, বিএনপি-জামায়াত ধর্মান্ধদের টাকা খেয়ে মিথ্যাচার ও মিথ্যা রিপোর্ট দেয়।
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর বিকালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের বাগবাড়ী চৌবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল ও সব সময়ই গণতন্ত্র চর্চা করে এসেছে। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এবং দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণে সব আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। আগামী নির্বাচনেও দলটি গণতন্ত্র চর্চা করবে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ। কোনো শক্তি, চক্রান্তকারী ও বিদেশিদের পা চাটে এমন কেউ এ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই গণতন্ত্র চর্চা করে এসেছে। বহির্বিশ্ব সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে যতই
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে বিরোধীদল নির্বাচনে আসবে না বলছে। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তাদের অধিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনারের এখতিয়ারে হবে। পৃথিবীর কোথাও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। জাপান বলেন এমন কি আমাদের পাশের দেশ শ্রীলংকা, ভারত, আমেরিকা কোন কান্ট্রিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সেই নির্বাচন তো তারা কোনদিন মেনে নেয়নি। তারা কি বলছে, তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে আগামী নির্বাচনে তারা যেন বিজয়ী হয়। সেই সুযোগ আমরা তাদেরকে দিব না। আজ বহুদল ভুল সিদ্ধান্ত ও কৌশলের জন্য তাদের প্রজ্ঞার অভাবে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এই বিএনপি যত বড় দলই হোক না কেন। সরকার বিরোধী আন্দোলনে তারা ব্যর্থ হবে। কর্মীরা হতাশ, বিপর্যস্ত ও দিশেহারা হয়ে বিপথে পরিচালিত হবে। এটা দেশের জন্য ভালো না। আমরা চাই বাংলাদেশে একটা শক্তিশালী ও ভালো বিরোধীদল থাকুক। যারা গঠনমূলক রাজনীতি করবেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকবেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই তো বিএনপি বিশ্বাস করে না। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নীতি থেকে আমরা সরে যাইনি। কোন চাপে, যত রকমই স্যাংশন দিক না কেন, জেল জুলুমের ভয় দেখাক না কেন আমরা অবশ্যই প্রতিরোধ করব। কোনক্রমে চাপের মুখে আমরা নত শিকার করব না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপির ভাষায় আরেকটি রেজুলেশন তারা নিয়েছে। আপনারা বাংলাদেশে টিম পাঠান। আপনারা বলেছেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নাই, কথা বলার অধিকার নাই, মানবাধিকার হুমকির মুখে।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, মানবাধিকার কি শুধু মিথ্যাচার করা? আপনারা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কথা বলেন। বাংলাদেশের দুই-এক ভাগ সংখ্যালঘু যদি বলে আওয়ামী লীগ তাদেরকে নিরাপত্তা দেয় নাই, সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নাই। তাহলে আমরা এ দেশে সরকারে থাকবো না। এ দেশে হিন্দু, খ্রিস্টান, গারো, চাকমা, প্রতিটি মানুষের এই সংখ্যালঘুদের ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের অধিকার সবচেয়ে বেশি থাকে। নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অধিকার ভোগ করে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হোসেন মানিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের এমপি), আলহাজ ছানোয়ার হোসেন এমপি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, তানভীর হাসান ছোট মনির এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাজাহান আনসারী, যুগ্ম সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন প্রমুখ।