গোপালপুর প্রতিনিধি: গোপালপুরের বিভিন্ন গ্রামে স্ক্র্যাচকার্ড প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এলএম মার্কেটিং ডিসকাউন্ট প্যাকেজ অফার নামের স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রি করা চক্রটির ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, সেলাই মেশিন, বাইসাইকেল, ওভেন, কুকারসহ নানা পণ্য দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ১০০ টাকায় একটি স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রি করা হয়। এতে কোনো পণ্য না পেলে ২০০ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। আর কোনো পণ্য পেলে তা চক্রটির নির্ধারিত দামে কিনতে বলে। যাকে স্বল্পমূল্য বলে দাবি করছে তারা। সেই সঙ্গে জমা হিসেবে দিতে হয় ১ হাজার ৮০০ টাকা। এভাবে বেশি দামে নিম্নমানের পণ্য ধরিয়ে দিয়ে চক্রের সদস্যরা সটকে পড়ছেন।
উপজেলার জামতৈল গ্রামের কলেজ ছাত্রী নূপুর আফরিন জানান, কিছুদিন আগে এই চক্র তাঁর মা ও ভাবিকে বোকা বানিয়ে ৩০০ টাকা নিয়ে যায়। মোটরসাইকেলের লোভ দেখিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আগে টাকা পাঠাতে বলে এবং পণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়ার কথা জানায়। বিষয়টিকে প্রতারণা বুঝতে পেরে মাকে টাকা পাঠাতে দেননি আফরিন। তিনি আরও জানান, কয়েক মাস আগে তাঁর এক প্রতিবেশী চাচিকে বোকা বানিয়ে আটটি কার্ড বিক্রি করেছিল চক্রটি।
সাদিকা আফরিন নামে অপর এক গৃহবধূ বলেন, আমার মা বছরখানেক আগে এই টিকিট কিনেছিল। স্ক্র্যাচ করে একটি টিভি পাই, সেটা ৭ হাজার টাকায় কিনে আনতে হয়েছে। পরে মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি টিভির প্রকৃত দাম ৫ হাজার টাকা। টিভিটা অল্প কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আমাদের গ্রামের বাদশা স্যার একই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তিনি আরো জানান, চক্রটি স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রির জন্য পোড়াবাড়ী ফকিরবাড়ী সেতুসংলগ্ন জায়গায় কার্যালয় নিয়েছিল। পরে শুনতে পান কার্যালয়ের ভাড়া না দিয়েই পালিয়ে গেছে।
হেমনগর রোডের বাসিন্দা মিজানুর রহমান আশিক জানান, মধুপুরে তাঁর এক আত্মীয়ের কাছে এই কার্ড বিক্রি করা হয়েছে। কার্যালয়ের ঠিকানা দেয় হেমনগর রোডের শাহী জামে মসজিদসংলগ্ন এলাকা। অথচ এখানে এই কার্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।
ভুক্তভোগীদের কাছে এলএম মার্কেটিং ডিসকাউন্ট প্যাকেজ অফার নামের যে স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রি করা হয়েছে তাতে ঢাকার নবাবপুর রোডের ঠিকানা দেওয়া থাকলেও তা নির্দিষ্ট করা নেই। এ ছাড়া এতে স্থানীয় এজেন্টের দুটি ফোন নম্বর দেওয়া আছে। এর মধ্যে একটি নম্বরে কয়েকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। অপর নম্বরে ফোন দিলে শিহাব নামের একজন রিসিভ করে জানান, তাঁর সিমকার্ড ঢাকা থেকে দুই মাস আগে হারিয়েছিল। তিনি নতুন সিম নিয়েছেন। স্ক্র্যাচকার্ড বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
গোপালপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আঙ্গুর বলেন, এ ধরনের অভিযোগ প্রথম শুনলাম। এগুলো মূলত হায় হায় কোম্পানি। আমি খোঁজ নিচ্ছি, অস্তিত্ব পেলে আইনি পদক্ষেপ নেব। গোপালপুরে এদের ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এমএলএমের প্রতারণা দেখে গ্রাহকের শেখা উচিত। অফারের ফাঁদে পা না দিয়ে শোরুম থেকে পণ্য কিনলে সঠিক মান ও বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল মোর্শেদ জানান, এ নিয়ে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। লিখিত অবিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন।