সখীপুরে ছাত্রলীগের নেত্রী কর্মস্থলে অনুপস্থিত: রাজনীতিতে সরব

দুর্নীতি ফিচার শিক্ষা সখিপুর

সখীপুর প্রতিনিধি: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জেবুন নাহার শিলা নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও ছাত্র রাজনীতিতে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোন চাকরিজীবী সংগঠনটির স্বপদে বহাল থাকতে পারবে না, এমন স্পষ্ট নির্দেশনার পরও চাকরির পাশাপাশি স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।

 

 

চলতি বছরের শুরুর দিকে জেলার সখীপুর উপজেলার পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও এই ছাত্রলীগ নেত্রী জেবুন নাহার শিলা এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও গত ৮ মাসে তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেছেন মাত্র ৫৪ দিন।

 

 

জানা যায়, জেবুন নাহার শিলা এ বছর ২৪ জানুয়ারি কালিদাস পশ্চিম পানা উল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকছেন তিনি । অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে যোগদানের পর নিয়মিত ক্লাসে যান না ওই শিক্ষক। অধিকাংশ সময়ই থাকেন ইডেন মহিলা কলেজের হলে ৷ অংশগ্রহণ করেন ছাত্রলীগের কলেজ ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও। বিদ্যালয়ে যোগদানের পর এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৫৪ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেছেন তিনি । সর্বশেষ গত জুলাই মাসের ৯ তারিখে তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে এরপর থেকেই মেডিকেল ছুটিতে রয়েছেন। এপর্যন্ত তিনি মোট তিনবার চিকিৎসা ছুটি নিয়েছেন বলে জানা যায়।

চিকিৎসার ছুটিতে থাকা অবস্থায় কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের নানা প্রোগ্রামে তিনি অংশগ্রহণ করছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে অবস্থিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশেও অংশগ্রহণ করেন তিনি।

বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, ম্যাডাম অনেক দিন আগে আমাদের ক্লাস নিয়েছেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি আমাদের স্কুলে বেড়াতে আসেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কমলা বেগম বলেন, তিনি না থাকায় তার ক্লাসগুলো আমরা ভাগ করে নিচ্ছি এতে আমাদের উপরে বাড়তি চাপ পড়ছে। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ধীরেন চন্দ্র সরকার বলেন, কাগজে-কলমে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। তিনি চিকিৎসা ছুটি নিয়ে বহুদিন ধরে স্কুলে অনুপস্থিত। চিকিৎসা ছুটি শেষ হলে আবার নতুন করে তিনি ছুটি নেন। তিনি আরো বলেন, গত আড়াই মাস যাবত তিনি আমার সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করছেন না।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী জেবুন নাহার শিলার বক্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাফিউল ইসলাম বলেন, তিনি মেডিকেল ছুটিতে আছেন। কিন্তু যোগদানের পর থেকে মাত্র ৫৪ দিন স্কুলের উপস্থিত এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী ফারজানা আলম বলেন, এটা গুরুতর অনিয়ম এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমাকে বিষয়টি অবগত করেননি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। তদন্তপূর্বক খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *