সময়তরঙ্গ ডেক্স: বাংলার সিনেমাপ্রেমীদের এই দিনটি আজ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজকের এই দিনটিতেই জন্মেছিলেন বাংলা সিনেমার রাজপুত্র নায়ক সালমান শাহ।
১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দাড়িয়াপাড়ায় এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী আর মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। পরিবারের বড় ছেলে সালমানের আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন হলেও চলচ্চিত্রে সালমান শাহ নামেই পরিচিতি পান তিনি।
অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায় ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সালমান শাহ। সিনেমায় অভিনয়ের আগে টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন তিনি। সালমান শাহ অভিনীত নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘আকাশ ছোঁয়া’, ‘সব পাখি ঘরে ফিরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’, ‘ইতিকথা’, বিশেষ টেলিফিল্ম ‘স্বপ্নের পৃথিবী’।
এরপর সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে নব্বইয়ের দশকে চলচ্চিত্রে রোমান্টিক ঘরানার এক ভিন্নধারা তৈরি করে মাত্র ৩ বছরের ক্যারিয়ারে সর্বমোট ২৭টি সিনেমায় কাজ করেন সালমান। যার ১৩টি সিনেমাতেই চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি।
সালমান শাহ অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘জীবন সংসার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম প্রিয়াসী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভেতর আগুন’ ইত্যাদি। এসব সিনেমা দিয়েই আজও অমর হয়ে আছেন ক্ষণজন্মা এ তারকা।
সালমানই একমাত্র নায়ক, সর্বমহলে যিনি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে এবং তরুণদের স্টাইল আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের হলে গিয়ে ছবি দেখার অনভ্যাস দূর করেছিলেন। তাই সালমান অভিনীত ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার সবকটিই ছিল ব্যবসা সফল সিনেমা।
যদিও ব্যক্তিগত জীবনে এ নায়ক ছিলেন বিবাহিত। দক্ষ অভিনয়, সুদর্শন চেহারা আর বিশেষ স্টাইলের জন্য রাতারাতি দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেন এ স্বপ্নের নায়ক। ছেলে ভক্তদের পাশাপাশি প্রচুর মেয়ে ভক্তও ছিলেন।
চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। দাম্পত্য জীবনের ৪ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেন অভিনেতা। ওইদিন ঢাকার ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে এখনো রহস্য রয়ে গেছে।
তিনি বেঁচে থাকলে বাংলা সিনেমার এই সুপারস্টার আজ ৫২তম শুভ জন্মদিন পালন করতেন। ঠাঁই পেতেন বিশ্বের টপ টুয়েন্টি হ্যান্ডসাম ছেলেদের নামের তালিকায়ও। দেখতে দেখতে তার মৃত্যুর ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও ভক্তদের স্মৃতিতে আজও অমলিন হয়ে আছেন স্বপ্নের এ নায়ক।