মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: সন্তোষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে খাল দখল করে ক্যান্টিন তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ক্যান্টিন থাকা সত্বেও কেন, কি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালের বাইরে একটি সরকারি খাল দখল করে ক্যান্টিন করা হলো- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। ক্যাটিন ভাড়া দিয়ে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার জন্যই এটি স্থাপন করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
জানা যায়, সন্তোষে মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বমোট ৩৩টি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য তিনি ১৯৭৪-৭৫ সালে টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় সন্তোষে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক দাগ ৮০৩, ৮০৪ এর ১৫.৩২ একর জমি লীজের জন্য আবেদন করেন। সে বছরই তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন পীর শাহ্জামান মার্কেট এবং ভোগ্য পণ্য সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
১৯৭৬ সালে ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৪ সালে গঠন করা হয় সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাষ্ট বোর্ড। এই ট্রাষ্ট বোর্ডের অধীনেই ছিল এই জমি। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ট্রাষ্ট বোর্ডের একটি সমঝোতা স্বাক্ষর হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া সরকারি খাল; যার সাথেই রয়েছে সরকারি মহিষ প্রজনন কেন্দ্র। একসময় এই খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চললেও বর্তমানে খালটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই খালের অংশবিশেষ দখল করে বাউন্ডারি দেয়ালও নির্মাণ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে পালপাড়া ৫নং গেটে খালের উপর টিন দিয়ে প্রায় ত্রিশ ফুট লম্বা একটি ঘর করা হয়। ওই খালের পাড়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার অনুমতি নিয়ে আরো কয়েকটি দোকান করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো জায়গা থাকা সত্বেও কেন কর্তৃপক্ষ বাইরে এই দোকান ঘর করল। তাহলে ব্যক্তিগত লাভের জন্যই কি এখানে ক্যান্টিন করা হয়েছে?
ক্যান্টিন নির্মানের দায়িত্বে থাকা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ক্যান্টিন ছাড়াও আরো কয়েকটি ক্যান্টিন করার জন্য আমাকে আহবায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেন ভিসি স্যার। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই ক্যান্টিন করা হয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
পীর শাহ্জামান মার্কেট বাজার সমিতির যুগ্ম আহবায়ক মাসুম আহম্মেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খাল ভরাট করে রাস্তা করে খালকে সরু নালায় পরিণত করেছেন। এছাড়াও খালের পূর্বদিকে বাউন্ডারী দেয়াল নির্মাণ করে খালের কিছু অংশও নিজেদের দখলে নিয়েছেন। খালের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অসাধু শিক্ষক স্টেট কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিলে খাল ভরাট করে তারা ব্যক্তিগত লাভবার হওয়ার জন্য উপাচার্যকে ভুল বুঝিয়ে খালের উপর রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করেছেন। এতে খালের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হবে।
তিনি আরো বলেন, ওই খাল নিজেদের সম্পত্তি বলে উপাচার্য স্যারও মিথ্যাচার করেন। নিজেদের একটি জলাশয় ভরাট করতে হলেও অনুমতি নিতে হয়। কার অনুমতি নিয়ে তারা ক্যান্টিন করেছেন?
পীর শাহ্জামান মার্কেট বাজার সমিতির বর্তমান আহবায়ক ও মাওলানা ভাসানীর নাতি হাসরত খান ভাসানী বলেন, ১৯৭৬ সালে মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ে। ভাসানী হুজুরের স্বপ্ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার জন্য কিছু অসাধু শিক্ষক ও কর্মকর্তা সব সময়ে তৎপর থাকেন। খালের উপর ক্যান্টিন নির্মাণ তারই অংশ।
তিনি আরো বলেন, ভিসির দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা। বাইরের খাল দখল করে রেস্টুরেন্ট করে ভাত বিক্রি করা নয়। এর আগেও উপাচার্য টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়রের সাথে ভাগ ভাটোয়ারার মাধ্যমে অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের পায়তারা চালান। আন্দোলনের মুখে ওই অবৈধ মার্কেট নির্মাণ বন্ধ হয়েছে। আবারও তিনি খাল দখল করে ভাত বিক্রির দোকান বসিয়েছেন। তার এহেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ভাসানী পরিবার, পীর শাহজামান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও এলাকাবাসী নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, এই ধরণের প্রশাসন সরিয়ে নদী নালা খাল বিল বাঁচান।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিক হোসেন বিএসসি বলেন, খাল ভরাট করে দোকান ঘর করতে হবে এটা কোনভাবেই মানা যায় না। উপাচার্যের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বেড়িয়ে এসে সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা প্রয়োজন।
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ, এস, এম সাইফুল্লাহ বলেন, উপাচার্য তার খেয়াল খুশিমত যা ইচ্ছা তাই করেন। কোন বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কোন পরামর্শ করেন না। আমরা শুনেছি ৫নং গেটের বাইরে খালের উপর একটি দোকান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা আর কিছুই জানি না।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন বলেন, ভেতরে একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। সেখানে এতো শিক্ষার্থীদের সংকুলান হয় না। এছাড়াও ওই ক্যাফেটেরিয়াতে খাবারের দামও বেশি। অনেক গরিব ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে ক্যাটিনে খাওয়া সম্ভবও নয়। তাই তাদের কথা চিন্তা করে যাতে কম টাকায় খেতে পারে এ কারণে গেট সংলগ্ন একটি ক্যান্টিন করা হয়েছে। ওই ক্যাটিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরিচালনা করা হবে। কম টাকায় যে খাওয়াতে পারবে তাকে ক্যান্টিন দেওয়া হবে। এখানে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই।