বাসাইল প্রতিনিধি: বাসাইলে উত্ত্যক্ত করায় ও অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি দেওয়ায় আলিফা খানম জুঁই নামের এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার, ৩০ আগস্ট বিকালে উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের মটরা সাহাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আলিফা খানম জুই ওই গ্রামের আসাদুজ্জামানের মেয়ে। সে উপজেলার লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
অভিযুক্ত বখাটে বাধন ওরফে পিচ্চি বাধন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বীরপুশিয়া নয়াপাড়া গ্রামের প্রবাসী কামরুল ইসলামের ছেলে।
জানা যায়, উপজেলার লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফা খানম জুইকে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার মাঝে দীর্ঘদিন ধরে পিচ্চি বাধন নামের এক বখাটে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। সম্প্রতি উত্ত্যক্তের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। মাঝে মধ্যে ওই ছাত্রীকে অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার বিকালে বখাটে বাধনসহ তার পরিবার এবং ওই ছাত্রীসহ তার পরিবারকে ডেকে নেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সেখানে বখাটে বাধনকে শাসিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ওই ছাত্রীকেও বেশ অপমানিত করা হয়।
এরপর বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে ফেরার পর ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে বাসাইল থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ওই বখাটের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নিহতের পরিবার।
নিহত শিক্ষার্থীর মা রূপা বেগম বলেন, আমি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকি। আমার মেয়ে গ্রামে তার দাদা-দাদির সঙ্গে থেকে লৌহজং উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করত। দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে বখাটে বাধন জ্বালাতন করে আসছিল। বুধবার বিদ্যালয়ে সালিশে আমার মেয়ের ওপরেও দোষ চাপানো হয়। সালিশ থেকে ফিরে মনের কষ্টে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে। আমি বখাটে বাধনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের দাদি রানি বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধন আমার নাতনিকে জ্বালাতন করে আসছিল। তার কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে অ্যাসিড মারার ভয় দেখানো হতো। বুধবার বিদ্যালয়ে সালিশে আমার নাতনির ওপরেও দোষ চাপানো হয়। সালিশ থেকে ফিরে মনের কষ্টে আত্মহত্যা করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরজু জমাদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষক ও দুই পরিবারের লোকজন নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে বাধনকে শাসিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও মেয়েটি কেন আত্মহত্যা করল আমরা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় তিনটি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় এখানে বখাটের উৎপাত বেশি। তাদের কিছু বলাও যায় না। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে প্রতিনিয়ত মেয়েদের ডিস্টার্ব করে। ওই মেয়েটির আত্মহত্যার পেছনে বখাটে বাঁধনের প্ররোচনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে বখাটে বাঁধনের বাড়িতে সরেজমিনে গেলে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল নম্বরে কল দিলে বাঁধনের মা বুলবুলি বেগম বলেন, বুধবার বিকালে বাধনকে শিক্ষকরা ডেকে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দেন। এরপর কেন মেয়েটি আত্মহত্যা করলো আমরা জানি না।
বাসাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান বলেন, ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। খবর পেয়ে মেয়েটির বাড়ি ও বিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে বখাটে বাধনের উত্ত্যক্তের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে লাশটি ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার ক্ষেত্রে শুধু বখাটে বাধন নয়, শিক্ষকদেরও দোষ রয়েছে।