নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতারাতি ধনী হওয়ার ফাঁদে পা দিয়ে টাঙ্গাইলের হাজারও বিনিয়োগকারী এমটিএফই নামের বিদেশি অ্যাপে বিনিয়োগ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতারিত হওয়ার পর তারা তথাকথিত টিম লিডারদের দেখা পাচ্ছেন না। আর এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতেও পারছেন না।
টাঙ্গাইলে এমটিএফই অ্যাপে যারা বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছেন তারা ‘টিম লিডার’ হিসাবে স্থানীয়দের মাঝে পরিচিত। এই টিম লিডারদের পরামর্শে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে (বিটকয়েন) বিনিয়োগ করে এখন দিশেহারা টাঙ্গাইলের হাজারো বিনিয়োগকারী। এ অ্যাপের মাধ্যমে জেলার ঘাটাইল, ভূঞাপুর ও মধুপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।
মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ-এমটিএফই হচ্ছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করতো। এখানে বিনিয়োগকারীদের একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা করে লাভ পাওয়া যাবে। এমন লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে অনেকে বিনিয়োগ করেন।
কিন্তু সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না, তখন বলা হয় সফটওয়্যার আপডেটের কথা। হঠাৎ করেই বিনিয়োগকারীদের অ্যাপের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ডলারের বিপরীতে বেশি পরিমাণে দেনা দেখিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয় এমটিএফই। এতে বিনিয়োগকারীরা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, কেউ স্বর্ণ বিক্রি করেছেন, কেউ জমি বন্ধক রেখেছেন, কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করেছেন, এভাবেই তারা ব্যবসার জন্য টাকা সংগ্রহ করেছেন। এখন তাদের অ্যাকাউন্ট শূন্য। সব হারিয়ে এখন তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জামশেদ নামে এক ভুক্তভোগী যুবক বলেন, বাড়তি লাভের আশায় প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। শুধু আমি না, পরিবারের একাধিক সদস্য এবং আমার পরিচিত অনেকেই বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন। হায়দার নামে এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে এই অ্যাপে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন সব টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
মোঃ করিম নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, বাবা ব্যবসার জন্য ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। ওই টাকা আমি এমটিএফই’তে বিনিয়োগ করেছিলাম। গত ২ সপ্তাহ ধরে অ্যাপে দেখাচ্ছিল যে, সার্ভার আপগ্রেড হচ্ছে। তখন অ্যাপ থেকে টাকা তোলা যাচ্ছিল না। হঠাৎ বুঝতে পারি, টাকা ওই কোম্পানি মেরে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, এমটিএফই’র মতো অদৃশ্য অ্যাপে বিনিয়োগ বন্ধে সর্বস্তরের জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আগামীতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এমন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করা হবে। বিনিয়োগকারী ও বিনিয়োগের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও অনেক বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে।