মধুপুর প্রতিনিধি: ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা বাজারের কাছে ছেলের ঘরে শিকলে তালাবন্ধ থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার জোয়াদ্দারের পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসলাম হোসাইন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শিকলে তালাবন্ধ থাকার তথ্য জানার পর তিনি পাইস্কা বাজারের পাশের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লাভলু ও বাবলু জেয়াদ্দারের বাড়িতে যান ।
এ সময় তার সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা দেখে হতবাক হয়ে যান।
শিকলে বাঁধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার জোয়াদ্দার জানান, কেন আমাকে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে, তা আমি নিজেও জানি না। ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। অথচ আজ আমি নিজেই পরাধীন হয়ে গেছি।
তিনি আরো জানান, তার ব্রেনের সমস্যা থাকলেও এখন তিনি সুস্থ, তার ছেলেরাই তাকে দীর্ঘদিন যাবৎ অযথা এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। সরকারি ভাতার বিষয়ে জানান, ভাতার বইয়ের পুরো পাতায় ছেলেরা স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছে। তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে কখনো তার খোঁজ নেওয়া হয়নি। তিনি মুক্ত জীবনের আঁকুতিও জানান।
ধনবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন কালু বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার জোয়াদ্দার শিকলে বন্দি থাকার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করে জানান, সে মানসিক বিকারগ্রস্ত। মুক্ত থাকলে অঘটন ঘটাতে পারেন। তাই ছেলেরা তাকে এ অবস্থায় রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসলাম হোসাইন জানান, কথা বলার সময় তার মধ্যে মানসিক বিকারগ্রস্তের তেমন লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তিনি শিকলবন্দি বা ছেলেরা কেন শিকলে বেঁধে রেখেছেন। তার উত্তর ছিল- তিনি নিজেও তা জানেন না।
তিনি আরও জানান, ৭ দিনের মধ্যে তার গ্রামের বাড়ি ভাতকুড়াতে বীরনিবাস নির্মাণ করে সেখানে তুলে দেওয়া হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপককে বলে দেওয়া হয়েছে তার হাতে ছাড়া অন্য কারো হাতে ভাতা দেওয়া যাবে না। তার ভরণপোষণ ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ছেলেদের বলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা জব্বার উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিন জোয়াদ্দারের ছেলে। ০১১৮০৮০০৬৩ মুক্তি বার্তা নম্বর আর ৬০১৭ গেজেট নম্বরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালে ঢাকার আশরাফ জুট মিলে মেকানিক সেকশনে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। যুদ্ধ শুরু হলে ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ১১ নম্বর সেক্টরে আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি।