সময়তরঙ্গ ডেক্স: এক কিশোরীকে ধর্ষণের মামলায় টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন ৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে মামলার বাদী ওই কিশোরীর নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
গত ১৩ জুলাই গোলাম কিবরিয়ার জামিন স্থগিতের আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গোলাম কিবরিয়ার জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের তারিখ (২১ আগস্ট) নির্ধারণ করা হয়।
আজ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি। গোলাম কিবরিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ।রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ধর্ষণ মামলায় গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ এপ্রিল চেম্বার আদালত জামিন স্থগিত করেন। গোলাম কিবরিয়াকে টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।
গত ১৫ মে গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তিনি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দিয়ে গোলাম কিবরিয়াকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার আদালত।
ত ৫ এপ্রিল গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। গত ২৭ জুন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একটি সন্তানের জন্ম দেন বাদী।গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই। তিনি টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন। মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব (৩৫)কেও আসামি করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে ওই কিশোরী বিষয়টি বড় মনিকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে কিশোরীকে যেতে বলেন।
কিশোরীর অভিযোগ করেন, সেখানে যাওয়ার পর তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ করেন বড় মনি। ঘটনা প্রকাশ করলে ‘মেরে ফেলার হুমকি’ দেন। প্রথমবার ‘ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখিয়ে’ বড় মনি পরে আরও কয়েকবার ‘ধর্ষণ করেন’ বলে মামলায় অভিযোগ করেছেন কিশোরী।
মামলায় তিনি বলেছেন, ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এ কথা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনি ওই কিশোরীকে ‘তুলে নিয়ে যান’ এবং একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রেখে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। মামলায় তার স্ত্রী নিগার আফতাবও ওই কিশোরীকে ‘মারপিট’ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।
এ মামলায় গত ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন বড় মনি। বিচারক তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।