টাঙ্গাইল- ৭ আসন: আ' লীগের প্রত্যাশা বিজয় অব্যাহত, বিএনপি চায় আসন পুনরুদ্ধার

টাঙ্গাইল- ৭ আসন: আ’ লীগের প্রত্যাশা বিজয় অব্যাহত, বিএনপি চায় আসন পুনরুদ্ধার

ফিচার মির্জাপুর রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ রেখে প্রচারে নেমেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগ চায় এখানে বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে; অপরদিকে বিএনপি চায় দীর্ঘদিন হাতছাড়া আসনটি পুনরুদ্ধার করতে।

 

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুদলেই রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য, কোন্দল। তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করছেন। উপজেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও আলোচনা-সমালোচনা চলছে এমপি পদে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অঙ্গন ততই সরগরম হয়ে উঠছে। নির্বাচন ঘিরে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বেড়েছে।

 

জানা গেছে, রাজধানীর সন্নিকটে এবং জেলার প্রবেশ দ্বার হওয়ায় মির্জাপুর উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-৭ নির্বাচনী আসনটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০১ জন, নারী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৭৮ জন এবং ৪জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।

 

এ নির্বাচনী আসনটিতে রয়েছে- গোড়াই এলাকায় বিশাল শিল্পাঞ্চল, মহেড়ায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা প্রতিষ্ঠিত ১ হাজার ৫০ বেডের কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী মেডিক্যাল কলেজ, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এবং কয়েক ইউনিয়ন জুড়ে পাহাড়ি বনাঞ্চল। উপজেলাজুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বলিষ্ঠ ভূমিকা ও অবদান। ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজধানীর বাইরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে।

 

এছাড়া, স্থানীয় দালাল ও রাজাকারদের সহযেগিতায় ৭ মে গণহত্যা চালিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমুদিনী হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস, টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজ ও মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ শতাধিক বাঙালিকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে।

 

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এআসনে যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন- ১৯৭৩ সালে ফজলুর রহমান খান ফারুক (আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে শাহ্ মোস্তানজিদুল হক খিজির (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে খন্দকার বদরউদ্দিন (বিএনপি), ১৯৯৬ সালে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী (বিএনপি), ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটানা আওয়ামী লীগের প্রার্থী একাব্বর হোসেন। তিনি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে মারা যাওয়ার পর আসনটিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উপনির্বাচনে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে খান আহমেদ শুভ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আগামী নির্বাচন ঘিরে এ আসনটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতাদের মধ্যে রয়েছে নানা তৎপরতা ভাবনা ও পরিকল্পনা। বড় দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে বেশ আগে থেকেই নির্বাচনী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটিতে স্পষ্ট গ্রুপিং লক্ষ্য করা গেছে। বড় তিনটি দলে একাধিক শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব ততই বাড়ছে। তিনটি দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের বাগে আনতে ও কেন্দ্রের নজর কাড়তে স্ব স্ব অবস্থান থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দুই দলেই একাধিক প্রার্থী থাকায় নেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জাতীয় পার্টির একটি অংশ রওশন এরশাদ ও অপরাংশ জিএম কাদেরের পক্ষাবলম্বন করায় তাদের মধ্যেও বিভেদ ও অন্তর্দলীয় কোন্দল দেখা দিয়েছে। উপজেলায় জাতীয় পার্টি কার্যত দুইভাগে ভাগ হয়ে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকট হয়েছে।

এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মী, সব শ্রেণি-পেশার লোকজন ও সুধীজনদের নিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছেন। এলাকার কোথায় কী সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা করছেন। কর্ম ও আচরণের মাধ্যমে এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মন জয় করতে চেষ্টা করছেন তিনি। আসনটিতে ৪৫ হাজার ৯৮১টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে। এইসব ভোটারের সঙ্গে তিনি একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

খান আহমেদ শুভ এলাকায় নিয়মিত উঠান বৈঠক এবং উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। কর্মীবান্ধব হিসেবে এলাকার তরুণ-যুব সমাজের অন্তরে ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছেন। বঞ্চিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সমাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সরকারের নানা সফলতা তুলে ধরছেন।

এসব বিষয়ে খান আহমেদ শুভ বলেন, প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেনের অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার চেষ্টা করছি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে পরিকল্পনামাফিক প্রত্যেক ইউনিয়নে কর্মী সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছি। দলকে সুসংগঠিত করতে পারলেই নৌকার বিজয় সহজ হবে।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে মির্জাপুরকে মডেল হিসেবে উপহার দেব।

এছাড়াও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মীর শরীফ মাহমুদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ড. মেজর (অব) খন্দকার এ হাফিজ, সাবেক এমপি একাব্বর হোসেনের ছেলে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহফীম হোসেন সীমান্ত, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন।

উল্লেখিত দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে মীর শরীফ মাহমুদ, তাহফীম হোসেন সীমান্ত, মধুমতি ব্যাংকের পরিচালক রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি, সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল, আবুল কালাম আজাদ সবাই ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেও তারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, সংগঠনের ভিত মজবুত করতে এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে আমরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের কমিটি পুনর্গঠন করতে সক্রিয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মশালা করে যাচ্ছি। আমি ছয়বার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আশাবাদী বলে তিনি জানান।

উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য রাফিউর রহমান খান ইউসুফজাই সানি বলেন, আমার বাড়ি মির্জাপুরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। এই অংশের ছয়টি ইউনিয়ন সব সময়ই বঞ্চনার শিকার এবং কোনো উন্নয়নই হচ্ছে না। যদি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন প্রদান করেন তাহলে এই ছয় ইউনিয়নসহ ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় দলমত নির্বিশেষে সবার পাশে থেকে উন্নয়নকাজ করব। স্মার্ট, সুশাসিত, সচ্ছল, তিলোত্তমা মির্জাপুর গড়ে তুলতে আমি বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে আমি কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রতিটি দরিদ্র পরিবার থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী অন্তত একজনকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মাদক নির্মূল, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রীর ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন করতে চাই।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসীর সেবায় আত্মনিয়োগ করে আসছি। ভবিষ্যতেও তাদের সবার পাশে থাকতে চাই। এশিয়াখ্যাত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার মির্জাপুরকে প্রয়াত সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন যে ভাবে উন্নয়ন করেছেন, আমি সুযোগ পেলে সে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার প্রাণের মির্জাপুরের জনগণকে সেবার জন্য আমাকে সুযোগ দেবেন, তাদের পাশে রাখবেন, এমনটাই বিশ্বাস করি।

এই আসনটিতে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একাব্বর হোসেন টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার সময় মির্জাপুরে রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেনের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহফীম হোসেন সীমান্ত বলেন, আমার বাবাকে মির্জাপুরের মানুষ ভালোবেসে চারবার এমপি বানিয়েছিল। আমি তার সন্তান হিসেবে তার পথ অনুসরণ করে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। গতবার মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তবে এবার তিনি অত্যন্ত আশাবাদী বলে জানান। মনোনয়ন যাকেই দেওয়া হোক, দলের পক্ষে কাজ করবেন তিনি জানান।

মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি এবং করব। আমি মির্জাপুরে যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত করেছি। এ পর্যন্ত চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি দলের কাছে মনোনয়নের জন্য জোর দাবিদার। নৌকাকে বিজয়ী করতে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী করতে আমি দ্ঢ়ৃ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মনোনয়ন যাকেই দেবে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।

অপরদিকে, এ আসনটিতে বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা না আসায় নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না। তবে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার হটানো ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। দলটিতে রয়েছে পুরনো গ্রুপিং ও কোন্দল। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল। প্রার্থী বাছাইয়ের কারণে এ আসনটি বিএনপিকে বারবার হাতছাড়া করতে হচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ জানান, ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন) বিএনপি প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী নয়, এখানে ধানের শীষ জয়লাভ করেছিল। পরবর্তীতে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর কারণে এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা বারবার পরাজিত প্রার্থীকে নয়, নতুন প্রার্থী চান। আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর একক নেতৃত্বের কারণে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। সাঈদ সোহরাব রাজনীতিতে আসায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ণ বেড়েছে বলে তারা মনে করেন।

আসনটিতে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার সম্ভাবনা যাদের রয়েছে তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহসীন হলের সাবেক জিএস বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব, মির্জাপুর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক শ্রমিক নেতা ফিরোজ হায়দার খান।

বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই। সেই দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। দাবি পূরণ হলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে মির্জাপুরের ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী ফিরোজ হায়দার খান বলেন, আমরা তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করব। মির্জাপুর আসনটি এক সময় বিএনপির ঘাঁটি ছিল। উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ায় এই আসনটি দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের হাতছাড়া রয়েছে। আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর একনায়কতন্ত্রের কারণে এই আসনটি বারবার হাতছাড়া হচ্ছে। এই আসনে বিএনপির সবস্তরের নেতাকর্মী নতুন প্রার্থী চাচ্ছেন। সে হিসেবে ম্যাডাম খালেদা জিয়া আমাকে মনোনয়ন দিলে হাতছাড়া এ আসনটি বিএনপির ঘরে ফিরে আসবে।

অপর দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব বলেন, আন্দোলন ও দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি একসঙ্গে চলছে। মির্জাপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা চাচ্ছে নতুন মুখ। আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর অতীতের জনপ্রিয়তা এখন আর নেই। গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। এবার মনোনয়ন পরিবর্তন করে তাকে মনোনয়ন দিলে দলের সবস্তরের নেতাকর্মী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং বহুদিনের হাতছাড়া আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

মির্জাপুর আসনটিতে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ওয়াজেদ আলী খান পন্নী। এর পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে দুইবার অংশগ্রহণ করলেও বিজয়ী হতে পারেনি। তবে আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তিনি স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আগামী নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্যই দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে নিরাপদ মনে করে ভোট দেবে।

১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি গোলাম নওজব পাওয়ার চৌধুরী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাসনায় তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে দলটি থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, সে বিষয়ে এখনো জানা যায়নি।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জেপি), খেলাফত মজলিস, জাসদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইত্যাদি ছোট ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা এখনোও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়নি। আগামী নির্বাচন উপলক্ষে জামায়াত বা ইসলামী দলগুলোর তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জাতীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতি দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *