নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলনে দাম ভাল পাওয়ায় পাট চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। ইতিমধ্যে পাট কাটাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় সোনালি আঁশ পাট ও পাটের কাঠি বিক্রি করে স্বচ্ছলতা লাভের আশায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি বছর পাটের আশানুরূপ ফলন ও রোগবালাই কম হওয়ায় জেলায় এবার অধিক লাভের আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। জেলার ১২টি উপজেলায় পাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৫০ হেক্টর। যা থেকে অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর। পাট বেশি উৎপাদিত হয়েছে ৯৭০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। এ বছর উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার বেল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলার সদর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, বাসাইল, সখীপুর ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে জমি থেকে পাট কাটার কাজ। চাষিরা এখন পাট কাটায়, কেউ পানিতে জাগ দেওয়ায়, আবার কেউ পাট ধৌত করতে, কেউবা পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সব মিলিয়ে এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাটের মহাযজ্ঞ। ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। বাজারে পাটের দাম বেশি থাকায় চাষিরা এবার অধিক লাভের আশা করছেন। পাটের আশ বিক্রি করে যেমন কৃষক টাকা পায় তেমনি পাটের কাঠি
জ্বালানী হিসেবে, ঘরের বেড়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে আবার সোনালী আঁশের রাজত্ব ফিরে আসছে এ জেলায়। দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগদেউলী গ্রামের পাট চাষি শাহাদৎ হোসেন বলেন, এ বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এই আবাদ করতে ও পাট জাগ দিয়ে শুকিয়ে বিক্রি করা পর্যন্ত আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
প্রতি বিঘায় আমার ৯ মণ করে পাট হয়েছে। এ বছর প্রতি মণ পাটের দাম ২৬০০-২৭০০ টাকা হিসাবে আমি তিন বিঘায় ৭২ হাজার ৯০০ টাকার পাট বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিয়ে আমার ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা লাভ করেছি। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আগামীতে আমি আরও জমিতে পাটের আবাদ বাড়াবো।
একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। শুরুর দিকে পানি না থাকায় পাট জাগ দেয়া খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু এখন পানি আসায় পাট জাগ দেয়া সহজ হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত কিছু বাজপাট বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকা মণ দরে। এখন দাম কিছুটা ভালো। আমার পাটগুলো ১০-১৫ দিন পর বিক্রির উপযোগী হবে। এ রকম দাম থাকলে লাভবান হবো।
দেলদুয়ার উপজেলার সিলিমপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মোছাব্বির হোসেন জানান, আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি। এবছর ২৫০০-২৭০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছি। মণে ৫০-৬০ টাকা দরে লাভ করে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি। আমাদের এই বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ১ হাজার মণ পাট ক্রয়-বিক্রয় করা হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন পাট চাষিরা। পাট আবাদের সময় আমরা দেখি দেশীয় জাতের পাটের থেকে বিজেআরআই-৮, যা রবি-১ নামে পরিচিত ভারতের পাটের বীজের প্রতি কৃষকের চাহিদা বেশি থাকে। আমরা এবছর রবি-১ জাতের বীজ বেশি সরবরাহ করেছি। দেশীয় পাটের মধ্যে এ জাতটি সবচেয়ে ভালো। এই জাতটি এবার প্রণোদনা মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আমরা কৃষকদের পাট চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগতভাবে সহযোগিতা দিয়ে পাটের আবাদ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। পাটের বাজার মূল্য বেশি থাকায় পাট চাষে কৃষকরা দিন দিন আগ্রহী হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাট চাষিদের সাথে থেকে পাট আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।