সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে বন বিভাগের জমি জবরদখল করে ব্যক্তিগত একাধিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার কথা জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে বন কর্মকর্তার ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও আজো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং সাবেক বন কর্মকর্তা বনের জমি দখল করে তাঁর প্রয়াত মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় একটি মাদ্রাসা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন জানা যায়, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম ইব্রাহীম বনের জমি দখল করে তাঁর প্রয়াত বাবা হাজি হাতেম আলীর স্মৃতি রক্ষায় নির্মাণ করেছেন চারটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- স্কুল, মসজিদ, কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ। বিদ্যালয়ের সামনের বিশাল খেলার মাঠটি ‘ইব্রাহীম মাঠ’ নামেই পরিচিত। তিনি পরিবর্তন করেছেন চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের নাম। তাঁর পূর্বপুরুষদের বসতভিটার নামে গ্রামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভাতকুড়া’।
এছাড়া বন কর্মকর্তা কাদের চৌধুরী তাঁর প্রয়াত মেয়ে কাফিয়া চৌধুরী তাম্ভার স্মরণে বন বিভাগের জমি দখল করে হাফেজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেখানে উন্মুক্ত জলাশয়ও খনন করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কালিদাস হতেয়া সড়কে একই দাগে পাকা সড়কসংলগ্ন ২৫-৩০ হাত একটি টিনের ঘর রয়েছে। যেটি বন বিভাগের উপকারভোগীদের সভা- সমাবেশের জন্য নির্মাণ করা হয়। শাল-গজারি বন উজাড় হওয়ায় ওই ঘরটিও কাজে আসছে না। ঘরটি এখন আওয়ামী লীগ নেতা এস এম ইব্রাহীম দখলে রেখেছেন। এছাড়া সড়কের দুই পাশে নির্মিত ১০-১২টি দোকানের মধ্যে ৪-৫টি তাঁর দোকান। বাকিগুলোও বরাদ্দ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের হতেয়া রেঞ্জের বহুরিয়া মৌজার সংরক্ষিত বনের ২৮৩১ নম্বর দাগের সাড়ে ৩ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এসব স্মৃতি- স্থাপনা। এস এম ইব্রাহীম অতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। অন্যজন সাবেক বন কর্মকর্তা কাদের চৌধুরীর বাড়ি বাসাইল উপজেলায়। কাদের চৌধুরী ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে হতেয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা ছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহীমের সঙ্গে এই বন কর্মকর্তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি বন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকার সময়ই এসব স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়।
চতলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শামেস উদ্দিন জানান, সংরক্ষিত বনের জমিতে নির্মিত বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহীম। বিদ্যালয় ভবনটি সংরক্ষিত বনভূমির ২৮৩১ নম্বর দাগে। অথচ দলিলে প্রতিষ্ঠানটির জমি বিদ্যালয় ভবন থেকে ৪০০-৫০০ মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। যার দাগ নম্বর ২১১৫, ২১২১ ও ২৮৫১ বলে জানা গেছে।
হতেয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল আহাদ জানান, তৎকালীন বন কর্মকর্তার কাজটি দায়িত্বে অবহেলার শামিল। ওই স্থানে নতুন কোনো স্থাপনা তৈরির সুযোগ নেই। এলাকাটি বন বিভাগের বিশেষ নজরজারিতে রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম জানান, বিদ্যালয় ভবনটি বনের জমিতে কিনা, তাঁর আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে তৎকালীন বন কর্মকর্তা কাদের চৌধুরী আংশিক বনের জমি দখলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ওই কর্মস্থলে থাকার সময় আমার মেয়ে মারা যায়। তার স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীর উদ্যোগে হাফেজিয়া মাদ্রাসাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জমিই আমার কেনা।’
বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন ‘হাজী হাতেম আলী’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আওয়ামী লীগ নেতা এস এম ইব্রাহীম। তাঁর ভাষ্য, এলাকার মানুষের সহযোগিতা নিয়েই তাঁর বাবার স্মৃতি রক্ষার জন্য স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়ের অনুকূলে তিনি ৩০ শতাংশ জমি ওয়াকফ রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদুজ্জামান এ প্রসঙ্গে জানান, বন বিভাগের জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। তবে বন কর্মকর্তার বনের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।