ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস পালন করেছেন। শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে ভূঞাপুর স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের নিজস্ব কার্যালয়ে এ জাহাজমারা দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে সিরাজকান্দী ন্যাংড়া বাজারে জাহাজ ধ্বংস নিয়ে আমন্ত্রিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন। একইসঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠনটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়।
এসময় মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কাদেরিয়া বাহিনীর বেতার বিভাগের প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজ বাঙ্গাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা খোদাবক্স মিঞা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ গামা (গেরিলা), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাছেদ করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক মামুন তরফদার প্রমুখ।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে ১১ আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭টি যুদ্ধজাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে ভূঞাপুরে যমুনা নদী হয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। জাহাজগুলো যমুনার শাখা ধলেশ্বরী নদীর ভূঞাপুরের সিরাজকান্দি নামক স্থানে জাহাজের সারেং যাত্রাবিরতি জন্য নোঙর করে।
এ বিষয়টি কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার লোকজন নিয়ে ১০ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আক্রমণ চালান। তারা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস. ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল. সি-৩, ও এস. টি রাজনের দখল নেন।
এসময় অন্য জাহাজগুলো সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। দখলকৃত জাহাজ দুটিতে রাখা ১ লক্ষ ২০ হাজার বাক্সে তৎকালীন ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা আনলোড করে নিজেদের করে নেয়। আনলোড করে পরের দিন ১১ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়।
এ ঘটনায় ১১আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত পাক বাহিনীর সাথে কাদেরিয়া বাহিনীর তুমূল যুদ্ধ হয়। এতে ৩ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং আহত হয় অন্তত ২০ জন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসের ইতিহাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের নজির নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
এরপর কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তনি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসীম সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৭১ সালে ১১ আগস্ট ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসের দিন। এটি ঐতিহাসিক জাহাজমারা দিবস নামে পরিচিত।