ঘাটাইলের ছয়ানী বকশিয়া দাখিল মাদরাসা 'ভিলেজ পলিটিক্স'-এর শিকার!

ঘাটাইলের ছয়ানী বকশিয়া দাখিল মাদরাসা ‘ভিলেজ পলিটিক্স’-এর শিকার!

ঘাটাইল ফিচার শিক্ষা

ঘাটাইল প্রতিনিধি: ‘ভিলেজ পলিটিক্স’-এর শিকার হয়ে ঘাটাইল উপজেলার ছয়ানী বকশিয়া মাদরাসার চলমান কার্যক্রম বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তাকর্মীর শুন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বদ্ধের কারণে এক বিরূপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

 

জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলায় লোকেরপাড়া ইউনিয়নের ছয়ানী বকশিয়া দাখিল মাদরাসা ১৯৮৫ খ্রি. প্রতিস্ঠিত হয়। ছয়ানী বকশিয়া গ্রামের মরহুম মিঞা উল্লা সরকার ও তাঁর ছোটভাই মোকছেদ আলী সরকার ১০৫ শতাংশ জমি দান করে এ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৩ খ্রি. প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ভবন নির্মাণসহ প্রবেশপথে গেট নির্মাণে সহযোগিতা করেন দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মিঞা উল্লা সরকারের ছেলে এবং বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি নিকরাইল শমশের ফকির বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক, কবি ও বিশিষ্ট ছড়াকার মোঃ শাহজাহান আলী।

 

মাদরাসার অফিস সূত্র জানায়, বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রেণি থেকে দাখিল শ্রেণি পর্যন্ত ২৮৫ জন শিক্ষার্থী, ১১জন শিক্ষক ও ৩জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া, আরো ২জন কর্মচারীর পদ শুন্য রয়েছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের একজন আয়া ও একজন নিরাপত্তা কর্মী শুন্য পদে নিয়োগের জন্য একটি জাতীয় ও স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিরাপত্তা কর্মীপদে মোট ১১জন এবং আয়া পদে ৬জন আবেদন করেন। কিন্তু এর মধ্যে ২জন নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদনকারী লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে এডমিট কার্ড না পাওয়ার অভিযোগে পরীক্ষা স্থগিতের জন্য টাঙ্গাইল কোর্টে একটি মামলা দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করান। এছাড়া, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাজাহান আলীর বিরুদ্ধে ৭ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

 

সরেজমিনে মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জানান, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলীর সাথে এলাকার বাসিন্দা ও পিংনা সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোজাম্মেল হক মিন্টুর ব্যক্তিগত বিরোধের জের চলে এসেছে মাদরাসার উপর। এছাড়া শুনেছি পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য এক প্রার্থীর পক্ষে সভাপতির নিকট চাকুরি দেয়ার শর্তে তাদেরকে বিশ লক্ষ টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী তাদের প্রস্তাবে রাজী না হননি। এর কয়েকদিন পরেই তার বিরুদ্ধে ঘাটাইল সহকারী জজ আদালতে চারজন চাকুরিপ্রার্থী মামলা দায়ের করেন এবং মফিজ উদ্দিন ও আব্দুর রাজ্জাক প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন।

 

সরেজমিনে অভিযোগকারী ও মামলা দায়েরকারী মফিজ উদ্দিন ও আব্দুর রাজ্জাক এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা হয়। তারা সকলেই পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকুরি দেবার জন্য তার কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা গ্রহণসহ নানারকম অসহযোগিতা করার অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি দায়িত্বে থাকলে কোন প্রকার নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে হবে না বলে জানান। তবে তারা অর্থ গ্রহণ ও অনিয়মের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।

 

পিংনা সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোজাম্মেল হক মিন্টু অভিযোগ করেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার কারণে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী মাদরাসার পরিবেশ নস্ট করে ফেলেছেন। তিনি পরিচালনা কমিটিসহ এলাকার বিশিষ্ট গ্রামবাসীদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করায় কেউ তার উপর সন্তুষ্ট নয়। তিনি একজন বিশেষ দু’জন প্রার্থীর পক্ষাবলম্ভন করে তার নিকট হতে অবৈধভাবে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়োগ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু ছয়ানী বকশিয়া গ্রামে গিয়ে সরেজমিন তদন্তে তার অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।

 

পরবর্তীতে ৩ জুন, শনিবার অত্র মাদরাসায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করার কথা থাকলেও ২টি গ্রুপে বিভেদ সৃষ্টির আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী বলেন, আমি আমার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় সকল নিয়ম-নীতি মেনে সুপারসহ পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব কাজ সম্পন্ন করে আসছি। এলাকার কিছু লোকের অন্যায় আবদার-দাবী মেনে না নেয়ায় আমার প্রতি মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছে এলাকার দুষ্ট লোকেরা; যারা এ প্রতিষ্ঠানের মঙ্গল চায় না। আর আমার বিরুদ্ধে নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগের জন্য অর্থগ্রহণের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও আমাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করে শুন্যপদে নিয়োগ সম্পন্ন করবো।

এ প্রসঙ্গে মাদরাসার সুপার আলহাজ মাওলানা মোঃ আ. লতিফ মিঞা বলেন, আমি এ প্রতিষ্ঠানের পাশের বাসিন্দা। ১২ এপ্রিল ১৯৯৪ সাল থেকে দিনরাত এখানে অবস্থান করে প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় দেই। সবার সহযোগিতায় এ প্রতিষ্ঠান চালায়ে আসছি। আর মাত্র ৪ বছর চাকুরি আছে; আমি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই। আবার নতুনভাবে সাকুর্লার করে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে চাই।

ঘাটাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বে এ মাদরাসায় নিয়োগের বিষয়ে দুইবার পরীক্ষার তারিখ গ্রামের দুই পক্ষের বিরোধে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকায় স্থগিত করতে হয়েছে। মাদরাসার কমিটির একজন সদস্য ও কমিটির বাইরের গ্রামবাসীরা নিয়োগ নিয়ে হস্তক্ষেপ করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি মোঃ শাহজাহান আলী বিরুদ্ধে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়নি। পরে আবারও নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে মাদরাসার শুন্যপদে নিয়োগ পরীক্ষা সকলের সহযোগিতায় সম্পন্ন করা হবে।

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিয়া চৌধুরী বলেন, আমি অভিযোগের বিষয়টি অবগত হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছি। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *