নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় ৪০ বছর ধরে কাতুলী ইউনিয়নের তোরাপগঞ্জ বাজারে ‘বঙ্গবন্ধু স্টোর’ নামে একটি চায়ের দোকান চালান নূরুল ইসলাম মোল্লা নূরু। চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা নূরুল ইসলাম মোল্লা নূরু (৫৯) সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের মৃত. মোঃ আবেদ আলী মোল্লার ছেলে ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
যেখানে সারাদেশে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়, সেখানে স্থানীয়রা তৃণমূল আওয়ামী লীগের এ নেতার চা বিক্রি করে সংসার চালানোর বিষয়টি আদর্শ হিসেবে দেখছেন।
জানা যায়, ১৯৮৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু স্টোর নামে ওই চা স্টলটি বছরে আট হাজার টাকা ভাড়ায় তোরাপগঞ্জ বাজারে পরিচালিত হচ্ছে। দোকানে প্রতিদিন ২০ কেজি গাভির দুধ বিক্রি হয়। ওই দুধ দিয়ে চা, মালাই আর কফি বিক্রি করেন। এখানে প্রতি গ্লাস মালাই ৬০ টাকা, এক গ্লাস দুধ ৪০ টাকা, দুধ চা ১০ টাকা কাপ, কফি ২০ টাকা কাপ, আর লাল চা পাঁচ টাকা কাপ দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, পান আর সিগারেট। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দোকান চলে বলে জানান।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন নূরুল ইসলাম। ব্যক্তি হিসেবে অত্যন্ত সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এ ইউনিয়নসহ আশপাশের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মীর নামে নিয়োগ বাণিজ্য, তদবিরসহ নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ থাকলেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুর বিরুদ্ধে কোনো বিতর্ক নেই।
চায়ের দোকানে উপার্জিত টাকায় পরিবারের খরচ বহন করাসহ নিজ টাকা ব্যয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার সুনামও রয়েছে তার। বিতর্কিত না হওয়ায় তার দোকানের ক্রেতা নিজ দলসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও গ্রামের সাধারণ মানুষ। এই বাজারসহ আশপাশে বেশকিছু চা স্টল থাকলেও বঙ্গবন্ধু স্টোরের ক্রেতা সবচেয়ে বেশি।
বাজারের ব্যবসায়ী ও চৌবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন বলেন, নূরু মিয়া অনেকদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। লোক হিসেবেও ভালোমানুষ তিনি। টাঙ্গাইলসহ দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে তার দোকানে চা খেতে। তার দোকানে বেচাকেনা খুবই ভালো।
দোকানের ক্রেতা ও পাশের গ্রামের বাসিন্দা শামছুল হক বলেন, গাভির দুধের চা বিক্রি করায় ক্রেতা বেশি। এই দোকানের চা খুবই ভালো হয়। এ কারণে আমি প্রতিদিন আসি চা খেতে। বাজারে বেশকয়েকটি চায়ের দোকান থাকলেও এই দোকানের চা ব্যতিক্রম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসা আর পরিবারের দায়িত্ব পালন করা ব্যতীত তার বিরুদ্ধে নেই মারামারি কাটাকাটিসহ নোংরা রাজনীতির কোনো অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম মোল্লা নূরু বলেন, ৮/৯ বছর ধরে কাতুলী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। চা বিক্রির টাকায় আমার সংসার চলে। অন্য কোনো ব্যবসা বা জমিজমাও নেই। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও চা বিক্রি করাকে অনেকে খারাপ চোখে দেখলেও আমাকে যারা পছন্দ করেন তারা প্রশংসা করেন। চা বিক্রি করে আমি গর্বিত। কারণ, আমি পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করছি। দল ভালোবাসি। রাজনীতি করে কী পেলাম সেটি কখনো ভাবিনি।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর ভাষণ আমার খুবই পছন্দের। তাঁর আদর্শ আর কথাবার্তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেই তার নামে দোকানটি দিয়েছি। আগে খুবই ভালো ছিল। এখন বেচাবিক্রি একটু কম। আগে প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার টাকা বেচাবিক্রি হলেও এখন চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হয়।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা বলেন, নূরু ভাই দলের একজন নিবেদিত তৃণমূল নেতা। তিনি চা বিক্রি করে যেমন জীবিকা নির্বাহ করছেন, তেমনি চা স্টল থেকে দলের নিবেদিত প্রচার-প্রচারণাও করছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে খুবই সম্মানের চোখে দেখি।