ভূঞাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যমুনায় ভাঙন অব্যাহত

ভূঞাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যমুনায় ভাঙন অব্যাহত

পরিবেশ ফিচার ভূঞাপুর

ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সম্প্রতি যমুনা নদীর পানির বৃদ্ধি ও কমার মধ্য দিয়ে চললেও নদীভাঙন বন্ধ হয়নি। যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কমবেশি ভাঙন অব্যাহত থাকায় ক্রমেই বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

 

উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনে বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায় ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। এদের কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও কেউবা ভূমিহীন হয়ে আবার আশ্রয় নিচ্ছেন পাকা সড়কের পাশে।

 

জানা যায়, ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে আবারও পানি বৃদ্ধিতে নতুন করে ফের ভাঙন শুরু হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের শতশত পরিবার। যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই অসংখ্য বসত-ভিটা, কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। থাকার বসতভিটা হারিয়ে নদীপাড়ের ভাঙন-কবলিত পরিবারগুলো নতুন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

 

স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পাশাপাশি মাঝেমাঝে আবার পানির প্রবাহ কমে যায়। এতে করে উভয় সময়েই উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া, পাটিতাপাড়া, ভালকুটিয়া, মাটিকাটা, কোনাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে নদীপাড়ের শতশত বসতবাড়ি বিলীন অব্যাহত রয়েছে।

দেখা যায়, ভাঙনে বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায় আগেভাগে ভাঙন-কবলিত মানুষ ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এদের কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও কেউ আবার সড়কের পাশে আশ্রয় নিচ্ছে।

পার্শ্ববর্তী গ্রামের ভাঙনের শিকার আব্দুল বাসেত জানান, যমুনা নদীর ভাঙনে কয়েক বছর আগে কয়েক একর ফসলি জমি হারাই। একাধিকবার বাড়ি সরিয়ে এখন রাস্তার পাশে থাকি। আমাদের শেষ জায়গাটুকুও যমুনা এখন গ্রাস করে চলছে। আমরা নদীপাড়ের মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি।

একই গ্রামের আমেনা খাতুন বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে মাটিকাটা অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বসতভিটার অর্ধেকের বেশি নদীগর্ভে চলে গেছে। বাড়ির বসত ঘর ও আসবাবপত্র সরাচ্ছি; আজকালের মধ্যে বাকিটুকুও ভেঙে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ভাঙন না ঠেকালে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।

নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, সম্প্রতি যমুনা নদীর ভাঙনে অসংখ্য বসতভিটা, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। নতুন ভাঙনরোধে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পুনরায় জানানো হয়েছে। নদীতীরে দুয়েকদিনের মধ্যে ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা হবে।

ভূঞাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, কিছুদিন আগে ওখানে ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হয়। ফের নতুন করে ভাঙনের বিষয়টি আমার জানা নেই। সরেজমিনে পরির্দশন করে ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী, অর্জুনা, গাবসারা ও নিকরাইল ইউনিয়নে শতশত বসতবাড়ি, অন্যান্য স্থাপনা এবং বিস্তীর্ণ ফসলি জমি গ্রাস করে নিয়েছে। এর পাশাপাশি যমুনার অব্যাহত ভাঙনে পার্শ্ববর্তী কালিহাতী, সদর ও নাগরপুর উপজেলায়ও শতশত পরিবার বাড়িঘর এবং ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভাঙন রোধে ভূঞাপুরের চিতুলিয়াপাড়ায় ইতোমধ্যেই জরুরি সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, যমুনা নদীর চরাঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে, সেহেতু ওই নদী ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *