সময়তরঙ্গ ডেস্ক: টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র টাঙ্গাইল ডিসি লেক। দৃষ্টিনন্দন ডিসি লেক টাঙ্গাইল শহরের অন্যতম বিনোদনের স্থানটি কিছু দিন আগেও যেখানে নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় ছিল। বর্তমানে সেখানে শিশুরা ট্রেনের চালক, সিন্দাবাদের জাহাজের নাবিক, আবার ঘোড়ায় চড়ে পাড়ি দিচ্ছে তেপান্তরের মাঠ, আবার নাগরদোলায় দোল খেয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। ডিসি লেকের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যেন হাতছানি দিয়ে ডেকে অবসর কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে।
টাঙ্গাইল শহরে একটি বিনোদন পার্কের জন্য শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অরক্ষিত লেকগুলো সংরক্ষণ করে ৩৩ দশমিক ৪৫ একর জায়গায় লেক পুনঃখনন, দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ ও ভাসমান মঞ্চ তৈরি করতে ২ কোটি ৯১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মে থেকে। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রি. এটি উদ্বোধন করা হয়।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয়ভাবে তহবিল গঠন করে লেকের চারপাশে বনজঙ্গল পরিষ্কার, লেকের পানিতে চালানোর জন্য ফাইবার বোট ক্রয়, মাল্টিপারপাস কনফারেন্স কক্ষ, ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ, চারপাশে সৌন্দর্যবর্ধনকারী ফুলগাছ রোপণ, ভাস্কর্য তৈরি, আগত দর্শনার্থীদের বসার স্থান, ফুড কর্নার এবং লেক সংলগ্ন শিশু পার্ক তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও লেকের চারদিকে লাগানো হয়েছে রঙিন বাতি।
বর্তমানে প্রতিদিন বিকেলে শহরবাসী ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় হচ্ছে ডিসি লেকে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শিশুদের সঙ্গে আসছেন অভিভাবকরাও। এখানে বিভিন্ন খাবার স্টলে বসেও কাটাচ্ছেন সময়।
অবস্থান: টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের পূর্ব পার্শে ৩৩ দশমিক ৪৫ একর আয়তনের দৃষ্টিনন্দন ডিসি লেক অবস্থিত।
পর্যটন: এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। তবে প্রবেশ এর ফি হিসেবে জন প্রতি ২০ টাকা মূল্যের টিকেট কাটতে হয়।
যাতায়াত: ঢাকা থেকে দিনের ২ বেলাতেই সরাসরি টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য বাস যোগাযোগ আছে। বাস থেকে নেমেই রিকশা করে ডিসি লেক পার্ক এ যাওয়া যায়। আর রেলপথে টাঙ্গাইল স্টেশান এ নেমে টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ড গিয়ে আবার ওখান থেকে রিকশান নিয়ে যাওয়া যাবে।
রাত্রিযাপন: ডিসি লেক পার্ক এর কাছেই টাঙ্গাইল শহর। শহরের ভেতরে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। প্রায় ২০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত এক রুমের হোটেল এর জন্য বুকিং দেয়া যায়।
খাওয়ার ব্যবস্থা: টাঙ্গাইল শহর এর ভেতরেই বেশ কিছু ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ আছে। বাংলা খাবার এর জন্য ও রয়েছে বেশ কিছু ভালো মানের রেস্তোরাঁ। পার্ক এর ভেতরে একটা দৃষ্টিনন্দন খাবার এর ঘর আছে যেখানে কয়েকটি কফি শপ ও ভ্যারাইটিজ শপ থেকে হালকা খাবার কিনে খাওয়া যাবে।
দর্শনার্থীরা বলেন, শহরে বিনোদনের কোনো বিশেষ জায়গা না থাকায় এতদিন বিকেলটা কাটাতে হতো উদ্দেশ্যহীন এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়িয়ে। ডিসি লেক আমাদের সেই অভাবটা দূর করে দিয়েছে।
ডিসি লেক-এর উদ্যোক্তা টাঙ্গাইলের সাবেক জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন জানান, লেকটি তৈরি হওয়ার জন্য টাঙ্গাইলবাসীর অবসর সময়ে চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আর এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জন বেকার যুবকের। জেলা প্রশাসনের হাতেই ডিসি লেকটির সব ধরনের মালিকানা থাকছে। এছাড়া, এটি পরিচালনার জন্য নামমাত্র দর্শনার্থী ফি নেওয়া হচ্ছে।