এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলীতে কোটি টাকার প্রকল্প বালুবাহী ট্রাকে ভেস্তে যাচ্ছে

এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলীতে কোটি টাকার প্রকল্প বালুবাহী ট্রাকে ভেস্তে যাচ্ছে

কালিহাতী ফিচার

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতীর এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী গ্রামে নির্মাণাধীন একটি পাকা সড়ক নির্মাণ শেষ না হতেই স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা সড়কটি ব্যবহার করে বালু বিক্রি করায় সরকারের কোটি টাকার উন্নয়নের এ প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। স্থানীয় কাউন্সিলরসহ প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্বে স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী হতে পৌলী দক্ষিণ পাড়া পর্যন্ত পৌরসভার অর্থায়নে সড়কটি পাকাকরণ করা হচ্ছে। এই সড়কে সাবেক মেম্বার আব্দুল বারেকের বাড়ির সামনে দুই পাশের পতিত জমিতে বলগেট দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে। এই বালু আনলোড করার জন্য লোহার মোটা পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে। মোটা লোহার পাইপগুলো সড়কের উপর দিয়েই নেওয়া হয়েছে।

 

এছাড়া জমাকৃত বালু একস্থান থেকে অন্যস্থানে নেওয়ার জন্য দুটি স্যালো মেশিন বসানো হয়েছে। স্তুপকৃত বালু বিক্রি হওয়ার পর পরিবহনের জন্য ড্রাম ট্রাক লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভেকু মেশিন দিয়ে ট্রাকগুলোয় বালু তুলে দিচ্ছে। এই বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের ফলে কোটি টাকার নির্মাণাধীন সড়কটি বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নিয়মিত চলাচল করতে সাধারণ মানুষকে দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে।

 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এই এলাকার কাউন্সিলর সুকুমার ঘোষের যোগসাজসে প্রভাবশালী কিছু লোক বলগেট দিয়ে বালু এনে বিক্রি করছে। এলাকায় বলগেটের বালু আনলোড করায় নদীর পাড়ে দুইটি বাড়ির কিছু অংশ নদীতে ধ্বসে পড়েছে। এছাড়াও দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে হওয়া কোটি টাকায় নবনির্মিত সড়কটি ব্যবহার করে রাতদিন বালুবাহী ট্রাক চলাচল করায় ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসীর চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটছে।

 

এছাড়াও বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে ধুলোবালি গিয়ে বসত-বাড়িতে বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন আগে গালা ইউনিয়নের বড় বাসালিয়া সেতুর সাথে বলগেটের ধাক্কায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তারা ওই সড়কটি রক্ষার্থে বালু ব্যবসা বন্ধের জোর দাবি জানান।

পৌলী এলাকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের এ দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসন কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয় না। অনেকে বলে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এই বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

বালু ব্যবসায়ী মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, এলাকার কিছু যুবকরা মিলে সিরাজগঞ্জ থেকে বালু কিনে এনে বিক্রি করছি। নদী থেকে বালু তুলে তো বিক্রি করছি না। তবে নির্মাণাধীন সড়ক ব্যবহার করায় সড়কের যে ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।

এলেঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর সুকুমার ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি কাউন্সিলর হওয়ার পর পৌলি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছেন। ফলে বিকল্প হিসেবে স্থানীয় ড্রাম ট্রাক ব্যবসায়ীরা সিরাজগঞ্জ থেকে বলগেট দিয়ে বালু এনে বিক্রি করছে। সড়কটি ব্যবহার করার জন্য বালু ব্যবসায়ীরা পৌরসভায় একটি দরখাস্ত দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, বালু আনলোড করার সময় দু-একটি বাড়ির ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা আমি জানি, ওই ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলো মেরামত করার জন্য ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে। তবে তিনি বালু ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর-এ আলম সিদ্দিকী জানান, নবনির্মিত সড়কটি ব্যবহারের জন্য বালু ব্যবসায়ীরা কোন দরখাস্ত পৌরসভায় দেয়নি। দক্ষিণ পৌলিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সড়কটি নির্মিত হচ্ছে। সড়কের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি পৌর কর্তৃপক্ষ বরদাস্ত করবে না।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুসেইন জানান, বলগেট দিয়ে বালু আনায় আইনগত কোন বাধা নেই। তবে সড়ক ব্যবহারে কোন প্রকার বেরিকেড দেওয়া যাবে না। বেরিকেড দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *