মধুপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এখন পরিত্যক্ত

মধুপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এখন পরিত্যক্ত: মাদকসেবীদের আড্ডা

ফিচার মধুপুর

মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি এখন পরিত্যক্ত থাকায় এক ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আর সন্ধ্যার পর এখানে গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকে সুদৃশ্য তিনতলা ভবনসহ পুরো এলাকা। দিনের বেলায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসায় স্থানীয় এলাকাবাসী এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারীর দাবী জানিয়েছেন।

 

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও এলজিইডি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্প-এর আওতায় ২০১৫ সাল থেকে ৪২২ উপজেলায় প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে এসব ভবন নির্মাণ শুরু করে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। এজন্য ভবনে আয়বর্ধক সুবিধাদিসহ দোকান ও হলরুম ভাড়া এবং তথ্যপ্রযুক্তি নিশ্চিত করা হয়।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের সাইড সিলেকশন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন দ্বিধাবিভক্ত। সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হবির গ্রুপ মধুপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র্র নতুনবাজারে অবস্থিত সংসদের নিজস্ব ছয় শতাংশ জমিতে ভবন নির্মাণের দাবি জানান। অন্য কমান্ডার (২০১৪ সালে নির্বাচিত) পরিমল গোস্বামী গ্রুপ মদনগোপাল আঙিনা অথবা চাড়ালজানি মহল্লার খাসজমিতে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে জেদ ধরেন। এমতাবস্থায় তদানীন্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস শহরের এক পাশে অবস্থিত চাড়ালজানিতে ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের বড় একটি অংশের আপত্তি সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ভবন নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করা হয়। ২০২০ সালে আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন নির্মাণ শেষ হয়। ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ভাড়া দেওয়ার উপযোগী ১২টি দোকান এবং তৃতীয় তলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস এবং সুপরিসর সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নির্মিত ভবন হস্তান্তরে জটিলতা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রধান করে কমপ্লেক্স ভবন নজরদারির দায়িত্ব দেন।

 

গত আগস্টে মধুপুর উপজেলা প্রশাসন নবনির্মিত কমপ্লেক্স ভবন দেখাশোনার জন্য কয়েকজন নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার কাছে চাবি হস্তান্তর করেন। কিন্তু কমান্ডার হাবিবুর রহমান হবি গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম থেকেই অসন্তুষ্ট থাকায় কখনোই এ ভবনমুখী হননি। আর কমান্ডার পরিমল গোস্বামী বেশ কিছু দিন আগে পরলোকগমন করায় তার অনুসারীরাও কমপ্লেক্স ভবনে যান না। ফলে তিন কোটি টাকার ভবনটি এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যাতায়াতে ভালো রাস্তার অভাব এবং প্রধান সড়ক থেকে একটু দূরে অবস্থিত হওয়ায় ভবনটি কেউ ভাড়াও নিতে চান না। সর্বশেষ দেখা যায়, বাউন্ডারি দেওয়াল ডিঙিয়ে সাত-আটজন যুবক নেশার আড্ডা বসিয়েছেন; যা দেখার কেউ নেই।

 

চাড়ালজানির বাসিন্দা সীতারাম জানান, ভবনের প্রধান গেট মাসের পর মাস তালা মারা থাকে। পরিচর্যার অভাবে ভবনের চারপাশের ঝোপজঙ্গল ও আগাছায় এখন সাপ, বিচ্ছু আর মশা-মাছির প্রজননস্থল হয়েছে। ১৫ আগস্টের আগে উপজেলা প্রশাসন শ্রমিক দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এরপর সারা বছর আর কেউ খোঁজ রাখেন না।

 

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হবি জানান, শহরের প্রাণ কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিজস্ব জমি রয়েছে। পাঁচ দশক আগে এখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আধাপাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে বহুতল ভবনটি নির্মিত হলে বাণিজ্যিক ব্যবহার হতো। সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক দুরবস্থা নিরসনের যে উদ্দেশ্য নিয়ে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেছিল, তা সার্থক হতো। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কতিপয় মুক্তিযোদ্ধার ভুল পরামর্শে চাড়ালজানিতে ভবন নির্মাণ করায় মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে যেতে চান না। সেটি এখন ভূতুড়ে বাড়ি। মুক্তিযোদ্ধারা আগের মতোই নতুনবাজারের পুরোনো কার্যালয়ে বসেন। ফলে ভবন নির্মাণের নামে সরকারের ৩ কোটি টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অপর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক জেহাদী জানান, সাইড সিলেকশন নিয়ে প্রশাসনের কোনো দোষ ছিল না।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা ইয়াসমিন জানান, তার যোগদানের আগেই ভবনটি নির্মিত হয়ে যায়। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ভবনটি কেউ ভাড়াও নিতে চাচ্ছেন না। তবে অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যাতে নবনির্মিত কমপ্লেক্স ভবনে গিয়ে বসেন, সে জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *