সময়তরঙ্গ ডেক্স: দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের ৮৫তম জন্মদিন আজ। গুণী এই ব্যক্তিত্ব বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র আজ কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়; দেশব্যাপী আলোকিত মানুষ তৈরির এক আন্দোলনও বটে, যা দিনে দিনে আলোকিত জাতীয় চিত্তের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। মানবজ্ঞানের সামগ্রিক চর্চা এবং অনুশীলনের পাশাপাশি হৃদয়ের উৎকর্ষ ও জীবনের বহু বিচিত্র কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উচ্চতর শক্তি ও মনুষ্যত্ব বিকশিত হওয়ার এক আয়োজন স্যারের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র।
১৯৭৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে ১৫ জন সদস্য নিয়ে যে পাঠচক্রটি শুরু হয়েছিল, আজ সারাদেশে এর সদস্য সংখ্যা ২৫ লাখ। এর কর্মকাণ্ড ও অবয়ব এখন বিশাল। এটি কোনো গৎবাঁধা, ছককাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সজীব পরিবেশে জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। যাঁরা সংস্কৃতিমান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ- যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী; যারা জ্ঞানার্থী, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত এক অঙ্গন।
দেশের তরুণ ও আলোকপ্রত্যাশী প্রতিটি মানুষের মাঝে বইয়ের আনন্দ বিলিয়ে দেওয়া আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের আজকের এই দিনে কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কামারগাতি গ্রামে। তাঁর বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন শিক্ষক। ১৯৫৫ সালে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন।
১৯৬০ সালে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি র্যামেন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন। দেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি টিভি উপস্থাপক হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তিনি ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর সরকারি চাকরি জীবন শুরু। এরপর বর্তমান সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও ঢাকা কলেজেও শিক্ষকতা করেন। দেশে পাঠাগারের অপ্রতুলতা অনুধাবন করে তিনি ১৯৯৮ সালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেন; যা এখনো সক্রিয় রয়েছে। জন্মদিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই প্রিয় লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার।