সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়নের কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া গ্রামে নির্বাচনের দুই দিন আগে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে রাস্তায় ইট বিছানো শুরু করেছিলেন, কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার তিন দিন পর সেই রাস্তার ইট তুলে অন্য একটি সড়কের জন্য নিয়ে গেছেন ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর অনুুসারী।
সোমবার, ১৭ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে জামানত হারান আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইউসুফ আলী ভূঁইয়া। এতে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হন এবং পরে তাঁর অনুসারীরা রাস্তায় বিছানো ইট তুলে নিয়ে অন্য রাস্তায় নেন।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইউসুফ আলী ভূঁইয়া বলেন, ওই প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া ভুলক্রমে এক সড়কের ইট অন্য সড়কে নিয়ে গেছেন। এতে গ্রামবাসীর সঙ্গে হাবিবুল্লাহর ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, উপজেলার চারটি ইউপিতে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য গ্রামীণ অবকাঠামো সড়ক সংস্কারের লক্ষ্যে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর গ্রাম কুতুবপুরে ছয়টি টিআর প্রকল্প দেন। এর মধ্যে ৪ নম্বর ক্রমিকে ‘কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া ইট-সলিংয়ের মাথা থেকে চাটারপাড় পর্যন্ত ইট সলিংকরণ’ প্রকল্পে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ভোটের আশায় নির্বাচনের দুই দিন আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভিয়াইলপাড়া গিয়ে ওই প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে আনুমানিক ৪০ ফুট সড়কে ইট বিছানোর কাজ শেষ হয়। বাকি ২০০ ফুট সড়কে ইট বিছানোর কাজ নির্বাচনের পর শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তিনি ওই এলাকার মানুষের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার অনুসারী ওই প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করেন। তিনি সড়কের পাশে স্তূপাকার করে রাখা ইট ট্রাকে করে নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অন্য একটি সড়কে ইট বিছানোর কাজে নিয়ে যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাবিবুল্লাহ গতকাল ওই সড়ক থেকে তিন ট্রাক ইট নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে এক ট্রাক ইট তিনি নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছেন বলে তারা জানান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের পাশেই স্তূপাকার করে রাখা ইট নেওয়া ছাড়াও সড়কে বিছানো ইট শ্রমিক দিয়ে তুলে নেওয়া শুরু করলে স্থানীয় ব্যক্তিদের বাধায় তাঁরা চলে যান।
শুক্রবার সকালে দেখা যায়, আনুমানিক ৪০ ফুট জায়গাজুড়ে ইট বিছানো হয়েছে। এ থেকে ১০ ফুট জায়গার ইট সড়ক থেকে তুলে নেওয়ার চিহ্ন রয়েছে। সড়কের আশপাশে স্তূপাকার করে রাখা ইট দেখা যায়নি।
উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কুতুবপুর ভিয়াইলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কাদের জানান, ভোটের দুই দিন আগে ওই সড়কে ইট বিছানোর কাজ শুরু হয়। ওই সময় গ্রামবাসীর সহানুভূতি ও ভোটের আশায় দুই ট্রাক ইট-বালু ফেলা হয়। কিন্তু ভোটে পরাজিত হয়ে ইউসুফ আলী ভূঁইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর নির্দেশে হাবিবুল্লাহ মিয়া তিন ট্রাক ইট সেখান থেকে তুলে নেন এবং অন্য রাস্তার নির্মাণের কাজে নিয়ে যান।
ওই এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, সজীব ও নুরুল ইসলাম বলেন, সড়কের পাশে স্তূপাকার করে রাখা তিন ট্রাক ইট নিয়ে যাওয়ার পর শ্রমিকেরা বিছানো ইট তুলতে থাকেন। এ সময় গ্রামবাসী বাধা দিলে তাঁরা চলে যান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী, সদ্য বিজয়ী বড়চওনা ইউপির চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, ওই নির্মাণাধীন রাস্তার ইট নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে বৃহস্পতিবার রাতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।
ওই প্রকল্পের সভাপতি হাবিবুল্লাহ মিয়া বলেন, অন্য একটি সড়ক নির্মাণের জন্য আনা দুই ট্রাক ইট ট্রাকের ড্রাইভার ভুলক্রমে ওই সড়কে নিয়ে যান। পরে ওই দুই ট্রাক ইট সেখান থেকে আনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই সড়কের জন্য বরাদ্দ হওয়া আড়াই লাখ টাকার কাজ সমাপ্ত করা হবে।
সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আলম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পিআইওকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে। পুরো কাজ সমাপ্ত করা ছাড়া কোনোক্রমেই বিল দেওয়া হবে না।