করটিয়ার-কাপড়ের-হাট-প্র

করটিয়ার কাপড়ের হাট: প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন

ইতিহাস ও ঐতিহ্য জাতীয় টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর ফিচার

নাহিদ ইসলাম: দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদানকারী করটিয়ার হাটটি প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন। সদর উপজেলার করটিয়া হাটটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের হাট হিসেবে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীদের মিলনমেলা বসে এই হাটে।

 

 

জানা যায়, করটিয়ার হাট সপ্তাহে দুইদিন মঙ্গলবার ও বুধবার বসে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত পাইকারী বেচাকেনা চলে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে হাজার হাজার ক্রেতা আসেন এবং তাদের পছন্দ মতো কেনাকাটা করেন। মঙ্গলবার ভোর থেকেই হাজারো ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ঢল নামে এই হাটে। দেশের নানা প্রান্তের তৈরি কাপড় নায্য দামে বিক্রি হয় বলেই এই হাটটির এত সুনাম। এ কাপড়ের হাটের সাথে লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িয়ে আছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করটিয়া হাট বসে সপ্তাহে দুইদিন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত চলে পাইকারী বেচাকেনা। বৃহস্পতিবার চলে খুচরা বেচাকেনা। এদিন খুচরা কাপড়ের সাথে চলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বেচাকেনা। পাইকারী ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অর্ধেক দামে শাড়ি কাপড় কেনা যায়। কিন্তু খুচরা বিক্রয়ের সময় শাড়ি কাপড়ের দামটা তখন বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জেলার তৈরিকৃত প্রিন্টের বিভিন্ন প্রকার শাড়ি, থ্রিপিসসহ নানা কাপড় এখানে পাওয়া যায়। এছাড়াও হাটে থান কাপড়, শার্ট, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবীর কাপড়, ছাপা কাপড়, গামছা, উড়না, তোয়ালে ও লুঙ্গির বেচাকেনা চোখে পড়ার মতো। দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা পাইকারী দামে কাপড় বিক্রি করছেন; ক্রেতারাও পছন্দ মতো কাপড় কিনছেন।

 

 

হাটের ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, ১৫ বছর ধরে পাইকারি শাড়ী কাপড় বিক্রি করি। করোনার সময় কাপড়ের ব্যবসা করতে পারি নাই। সুতার দাম বেশি, শ্রমিকদের মুজুরি বেশি। আমরা কাপড়ের জাত ব্যবসায়ী। কাপড়ের ব্যবসা করে আমাদের জীবিকা অর্জন করতে হয়। কোনো উৎসব আসলে শাড়ী কাপড় বিক্রি বেড়ে যায়। তবে আগে যেমন বিক্রি হতো এখন আর তেমন শাড়ি কাপড় বিক্রি হয় না।

 

ব্যবসায়ী মুজিবর মিয়া বলেন, এই হাটে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন পাইকারি কাপড় কিনতে। আগের মতো তেমন বেচাকেনা নাই। ১০-১৫ বছর আগে এই হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেশি হতো, বেচাকেনাও ভালো হতো।সুতার দাম বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের মুজুরি বাড়ার কারণে অনেক তাঁতশিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাপড়ের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

হাটের আরেক ব্যবসায়ী সুব্রত পাল বলেন, করটিয়ার হাট টাঙ্গাইলের ঐতিহ্য। আমি ১৬ বছর ধরে এ হাটে শাড়ি বিক্রি করে আসছি। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও দেশের বাইরে থেকেও পাইকাররা আসে শাড়ি কিনতে। এখানে কাপড়ের দাম তুলনামূলকভাবে কম। এজন্য মানুষ এ হাটে শাড়িসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই হাটে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কেনাকাটা করতে আসেন।

 

সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান আনছারী বলেন, করটিয়ার হাট টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী হাট। এই হাটে আগে সপ্তাহে শত কোটির টাকার শাড়ী কাপড় বিক্রি হতো। এখন চার ভাগের এক ভাগ শাড়ী কাপড় বিক্রি হয় না।করোনার পর থেকে বেঁচাকেনা কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। পূর্বে হাটে রাস্তার সমস্যা ছিল, এখন আর সে সমস্যা নেই। হাটের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। হাটের উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *