নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আজমেরী পাগল’ নামে সুপরিচিত মোঃ নেওয়াজ আলী বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল সদরের ঘারিন্দা ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মনকুশিয়া গ্রামে দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে অসহায়ভাবে বসবাস করছেন। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর নাম সরকারী তালিকাভূক্তিতে অন্তর্ভূক্ত নেই। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর নাম সরকারী তালিকাভূক্তিতে অন্তর্ভূক্ত করা, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর বসবাসের জন্য ঘর প্রদান এবং চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করার জন্য আবেদন করেছেন।
জানা যায়, মোঃ নেওয়াজ আলী, পিতা- মৃত আশ্রব আলী জেলার সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ব্রাক্ষনকুশিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের অধীনে বহেড়াতৈল, নাটিয়াপাড়া, বাসাইল, পাথরকাটায় সক্রিয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী এবং ১১ নং সেক্টরের আঞ্চলিক অধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র প্রাপ্ত হন। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং ৩২৯০৮। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভূক্তির জন্য যাচাই বাছাই হলেও সেখানে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি আজমীর শরীফে অবস্থানের কারণে দেশে না থাকায় যথাসময়ে তাঁর কোন আবেদন মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির নিকট উপস্থাপিত করতে পারেননি।
মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নেওয়াজ আলী জানান, বর্তমানে তিনি কোন প্রকার সরকারী ভাতা পান না। হতদরিদ্র, অসুস্থ্য ও অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। ব্রাক্ষনকুশিয়ায় তাঁর পিতার ভিটিতে সামান্য মাথাগোঁজার মত একটি ঘর আছে, সেখানে বর্ষার সময় পানি পড়ে। তাঁর পরিবারে আয় রোজগার করার মত কেউ নেই। তাঁর পরিবারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী আর দুই পুত্র শহরের আদি টাঙ্গাইলে পৃথকভাবে বসবাস করে। ছেলেরা কোন খোঁজ-খবর নেয় না। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে নিজ বাড়ীতে বসবাস করছেন। তাঁর চিকিৎসা করানোর জন্য ও সংসারের দৈনন্দিন খরচের জন্য টাকার প্রয়োজন মিটাতে পারছেন না তিনি।
তিনি হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারী ভাতা প্রদানের তালিকাভূক্ত করা, মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ঘর প্রদান এবং চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করে কোন প্রতিদান পাননি বলে জানান।
এ বিষয়ে গালা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং বার্থা-ব্রাক্ষ্মনকুশিয়া মেম্বার রকিবুর রহমান খান তন্ময় বলেন, তিনি একজন হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স প্রায় ৮০ হলেও ভোটার কার্ড তৈরির সময় বয়স কম দেয়ায় বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না। এছাড়াও তিনি কোন প্রকার সহযোগিতা পাননি। তাঁর ঘর মেরামতসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমার জানা মতে আমার ইউনিয়নের পূর্বপ্রান্তে ব্রাক্ষ্মনকুশিয়া গ্রামের মোঃ নেওয়াজ আলীকে সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনে। তিনি পাগলপ্রকৃতির, সংসার বিচ্ছিন্ন মানুষ, বাড়ীতে ওরশ করেন এবং পাথর বিক্রয় করে আজমীর শরীফে গুড়েন। এলাকায় উপস্থিত না থাকায় তার নাম তালিকায় উঠেনি। তবে পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড আমরা তৈরি করে দেব।
২নং গালা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ডাঃ শহীদুল্লাহ্ বলেন, মোঃ নেওয়াজ আলী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হওয়া স্বত্ত্বেও গেজেটে তার নাম তালিকাভূক্ত না হওয়া দুঃখজনক। নাম তালিকাভূক্তির শুনানীর সময় উপস্থিত না হওয়ার কারণে তিনি বাদ পরেছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক আহ্বায়ক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন তালুকদার তাঁকে চেনেন, তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভূক্তির প্রসঙ্গে কোন কথা জানাতে পারেননি।