নিজস্ব প্রতিবেদক: বাসস্ট্যান্ডের অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বই পড়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিতে বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার এর উদ্যোগে টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী কয়েকটি বাস কাউন্টারে অণু-পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা সময় নষ্ট না করে বরং বই পড়েই কেটে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। এ উদ্যোগে খুশি হয়েছেন স্থানীয় বাস যাত্রীরা।
টাঙ্গাইল নতুন বাসস্ট্যান্ডের সকাল-সন্ধ্যা বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে সাঁটানো ছোট বুকশেলফে বিভিন্ন ধরণের ২০-২৫টি বই রাখা আছে। যেখান থেকে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা তাদের পছন্দমত বই নিয়ে পড়ে সময় কাটাচ্ছেন এবং চলে যাওয়ার সময় বই রেখে যাচ্ছেন বুকশেলফে ।
জানা যায়, সদর উপজেলার চৌরাকররা গ্রামে বিগত ২০১০ সালে কামরুজ্জামান সোহাগ নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন বাতিঘর আদর্শ পাঠাগার। বর্তমানে পাঠাগারের সদস্য আর বইয়ের সংখ্যা দুটোই হাজার ছাড়িয়েছে। টিনের চৌচালা একটি ঘর জুড়ে তাঁর পাঠাগার। ঘরের ভেতর কয়েকটি তাকে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। গল্প, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস থেকে শুরু করে চাকরির প্রস্তুতিমূলক বই সবই আছে সেখানে। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। এ সময়ের মধ্যেই চলে বই দেওয়া-নেওয়া। পড়াশোনার পর্ব শেষ করে কামরুজ্জামান এখন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। তিনি চাকরির পাশাপাশি এলাকার সমমনা তরুণদের নিয়ে বই পড়ার এ কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় অপেক্ষমাণ যাত্রী তাওহিদা স্বপ্নীল বলেন, গাড়ীর জন্য অপেক্ষার এই সময়টা খুবই বিরক্তিকর। বই পড়ার সুযোগ পেয়ে অনেক ভালো লাগছে। এভাবে মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরি হবে এবং সুন্দর সময় কাটবে। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ।
অপেক্ষমাণ আরেক যাত্রী খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, চাকরির সুবাধে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় প্রায়ই যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করি। এ সময় বই পড়ার ব্যবস্থা করাটা একটা চমৎকার উদ্যোগ। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বই পড়ার বিকল্প নেই। তিনি আরো জানান, অনেকক্ষণ বসে থাকলেও এখন আর বিরক্ত লাগে না। এ সময়টুকু বই পড়তে পারছি।
সকাল-সন্ধ্যা বাস কাউন্টারের ম্যানেজার নিখিল সরকার বলেন, বাস কাউন্টারে যাত্রীরা বই দেখে অবাক হয়ে যান। আমারও উপকৃত হচ্ছি, যাত্রীরা অযথা খোশগল্প না করে বই পড়ে। আমিও সুযোগ পেলে এখানে বই পড়ি। এ উদ্যোগের জন্য বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারকে ধন্যবাদ জানাই।
টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বাসযাত্রীরা হাতের কাছে বই পাচ্ছেন। তারা তাদের অপেক্ষার সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত হচ্ছে।
বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান সোহাগ জানান, যাতায়াতের পথে বাসের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় মানুষ গল্পগুজব করে অলস সময় পার করে দেন। তখনই বাসস্ট্যান্ডে বই রাখার ভাবনা মাথায় আসে। এ কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে জেলার বেশ কয়েকটি বাজারে সেলুন অণু-পাঠাগার চালু করেছেন বলে জানান।