mamunur-rosid

টাঙ্গাইলের গর্ব নাট্যকার মামুনুর রশীদ

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর ফিচার বিনোদন

সময়তরঙ্গ ডেক্স: পৃথিবীব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে দর্শক নন্দিত নাট্যকার মামুনুর রশীদ। নাটক রচনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ের সঙ্গেও যুক্ত। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের পথিকৃত হিসেবে তাঁর নাট্যকর্মে প্রখর সমাজ সচেতনতা লক্ষনীয়। তিনি অসংখ্য টিভি নাটক লিখেছেন এবং অভিনয়ও করেছেন।

 

শ্রেণীসংগ্রাম ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু নিয়ে নাটক লিখে ও নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশের নাট্য জগতে তাকে একটা আলাদা স্থান করে দিয়েছে। নাট্যকার ও অভিনয় শিল্পী হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশে সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভূমিকা-অবস্থান নিয়ে তাঁর আন্দোলন-সংগ্রাম, অবদান তাঁকে এক বিশেষ পরিচয়ে পরিচিতি ঘটিয়েছে।

 

বিশিষ্ট এই নাট্যকার ২৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৪৮ সালে তাঁর পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভাবনদত্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হারুনুর রশীদ এবং মাতার নাম রোকেয়া খানম। তিনি পারিবারিক বিষয়বস্তু নিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন ১৯৬৭ সালে।

 

নাট্যশিল্পের প্রতি তাঁর প্রকৃত ভালবাসা শুরু হয় টাঙ্গাইলে তাঁর নিজ গ্রামে যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁর নিবিড় পরিচয়ের সূত্র ধরে। এরপর ১৯৭১ সালে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এবং তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত হন। কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালে। স্বাধীন দেশে ফিরে এসে তিনি তৈরি করেন ’আরণ্যক নাট্যদল’।

 

মামুনুর রশীদ-এর রচিত প্রথম নাটক ‘পশ্চিমের সিঁড়ি’ দেশে অভিনীত হয় ১৯৭২ সালে। তাঁর রচিত ’ওরা কদম আলী’ নাটক ১৯৭৮ সালে মঞ্চায়িত হয় ।তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘গন্ধর্ব নগরী’ (১৯৭৪), ‘ওরা আছে বলেই’ (১৯৮১), ‘ইবলিশ’ (১৯৮৩), ‘এখানে নোঙর’ (১৯৮৪), ‘খোলা দুয়ার’ (১৯৮৪), ‘গিনিপিগ’ (১৯৮৫), ‘সমতট’ (১৯৯০), ‘মানুষ’ (১৯৯১), ‘অববাহিকা’ (১৯৮৬), ‘পাথর’ (১৯৯৩), ‘জয় জয়ন্তী’ (১৯৯৫), ‘লেবেদেফ’ (১৯৯৫), ‘পাবলিক’ (১৯৯৪), ‘রাষ্ট্র বনাম’ (১৯৯৭),‘এখানেই নোঙ্গর’ (১৯৮১), ‘সুন্দুরি’ (১৯৯৯), ‘ইতি তোমার আমি’ (১৯৯৯), ‘অর্পণ’ (১৯৯৯), ‘পুত্রদায়’ (২০০৪), ‘ভঙ্গবঙ্গ’ (২০১০), ‘অলসপুর’ (২০১৪), ‘নীলা’ প্রভৃতি।

 

মামুনুর রশীদ অভিনীত সিনেমা ও নাটকের মধ্যে রয়েছে – ’মনপুরা’, ‘কবর’, ‘ওরা আছে বলেই’, ‘তৃতীয় স্ত্রীর ভাগ্যে লেখা’,’ওরা কদম আলি’ প্রভৃতি। তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘একুশে পদক’ লাভ করেন ২০১২ সালে। ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ পান ১৯৮২ সালে এবং ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন ১৯৯০ সালে। এছাড়াও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী সম্মাননা, মাওলানা ভাসানী পুরস্কার, অনীক থিয়েটার সম্মাননাসহ তিনি দেশ-বিদেশে নানা পদক ও সন্মানে ভূষিত হয়েছেন।

নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, গ্রামেগঞ্জে ভেতর থেকে আমাদের যাত্রা, পালাগান, লোকগান ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটা প্রতিবিপ্লব হয়ে গেছে। আমাদের অজান্তেই সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা একটা সময় মুক্ত নাটক আন্দোলনের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত থাকার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। আমরা গ্রামগঞ্জে থেকে কাহিনি সংগ্রহ করে, নাটক নির্মাণ করা শুরু করেছিলাম। আমরা বাঙালি জাতীয়তাবাদ যদি রক্ষা করতে পারতাম, তাহলে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এ সংকটটা তৈরি হতো না। আমি মনে করি, জাতীয়তাবাদকে আমরা যদি জরুরি মনে করতাম, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। এই আইনে শুধু সাংবাদিক নয়, সংগীতশিল্পী, পালাগান যারা করেন, জারি গান, সারি গান, বাউল গান করেন, তাঁরা সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। ডিজিটাল ক্ষেত্রে মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য হয়তো আইনের দরকার আছে। কিন্তু আইন করার আগেই চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল, সেটা নিবর্তনমূলক হচ্ছে কি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *