ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় ভিনদেশি ড্রাগন ফলের চাষ বেড়েছে। শখের বসে ড্রাগন বাগান শুরু করলেও সম্প্রতি বাণিজ্যিকভাবে অনেক কৃষক চাষ করছেন ভেষজগুণ সমৃদ্ধ মিষ্টি ও সুস্বাদু ড্রাগন ফল।
জানা যায়, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ঘাটাইলে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চায় শুরু হয়। বর্তমানে উপজেলার ৩৫০ একর জমিতে ড্রাগনের আবাদ হচ্ছে। প্রতি বছরই বাড়ছে এই ফলের চাষ। চারা রোপনের পর বছর ঘুরতেই শুরু হয় বাগানে ফুল আসা। ফুল আসার ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মাথায় কাটা যায় রসে ভরা পাকা ফল। আর একটি ড্রাগন গাছ টানা ৩০-৪০ বছর ফল দিতে সক্ষম। এ কারণেই চাষিরা ঝুকছেন ড্রাগন ফল চাষে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ড্রাগন ফলের আদি নিবাস মেক্সিকো। বর্তমানে আমেরিকা, ভিয়েতনাম, মালেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ফল বেশ জনপ্রিয় খাবার হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশেও ব্যক্তি উদ্যোগে এ ফলের আবাদ শুরু হয়েছে।
ফলটি মিষ্টি ও হালকা টক জাতীয় স্বাদের নানা পুষ্টিগুণে ভরা। ক্যাকটাস জাতীয় ড্রাগন ফল গাছ সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দিতে হয়। ড্রাগনের ফুল সাদা ও লালচে লম্বাটে এবং অনেকটা নাইট কুইনের মতো। এ ফল লাল ও সাদা দুই রঙেরই হয়। গাছ লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু করে এবং ৩০-৪০ দিনের মধ্যে তা খাওয়ার উপযোগী হয়। ড্রাগন গাছে বছরে তিন থেকে পাঁচবার ফল আসে এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ফল পাওয়া যায় ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত ।
উপজেলা ড্রাগনচাষি সমিতির সভাপতি আবু হাসনাত তালুকদার জানান, ঘাটাইলের পাহাড়ী এলাকার ৭টি ইউনিয়নে ছোট বড় ৭০টি ড্রাগন ফলের বাগানে প্রায় ৩৫০ একরের উপরে জমিতে ড্রাগনের আবাদ হচ্ছে। সাগরদিঘি, জোড়দিঘি, লক্ষিন্দর,মহিষমারা, মাকড়াই, গারোবাজার, করিমগঞ্জ, মুরাইদ, মধুপুরচালা, বাসাবাইদ, সরাবাড়ি কাজলা, সিংহেরচালা মোমিনপুর এলাকায় ড্রাগনের বাগান বেশি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ঘাটাইল উপজেলার কাজলা গ্রামে আমি প্রথম ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি। বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে আমার ড্রাগনের বাগান রয়েছে। এক বিঘা জমিতে ৫০০টি চারা রোপণ করা যায়। প্রতি মৌসুমে একটি গাছ হতে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এক বিঘা জমির ড্রাগনের বাগান থেকে খরচ বাদে বছরে লাভ পাওয়া যায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি বছর ঘাটাইলে ড্রাগন চাষিরা ২০-২৫ কোটি টাকা আয় করে থাকে। ড্রাগন ফলের বাগানে হলুদ, পেঁপে, সবজিসহ নানা ধরনের সাথী ফসল আবাদ করা যায়।
উপজেলার সাগরদিঘি গ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা মতিউর রহমান খান শরীফ জানান, তিনি বেইলা গ্রামে দেড় একর জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন। বাগানে ফল আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বাগান থেকে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা দরে ।
ড্রাগন চাষি ও সাগরদীঘি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার জানান, তিনি গত বছর দুই একর জমিতে ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়েছেন। এ বছরই প্রথম ফল এসেছে। এবার তিনি ১০ লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, পাহাড়ি এলাকা ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করছেন এবং প্রতি বছরই আবাদ বাড়ছে। আমরা চাষিদের সবসময়ই প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকি ।