গোপালপুর প্রতিনিধি: গোপালপুর উপজেলার এক নিভৃত গ্রামাঞ্চলের ‘জয় বাংলা পাঠাগার’ জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। স্থানীয়রা পাঠাগারে স্থান পাওয়া অনেক দুষ্প্রাপ্য বই পড়তে পেরে খুব খুশি। বই বাড়িতে নিয়েও পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন পাঠকরা।
জানা যায়, উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের খামারপাড়া গ্রামে পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠা করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক আমেরিকা প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী। তিনি গত ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রি. ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পাঠাগারটির উদ্বোধন করেন।
জয় বাংলা পাঠাগারে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ছেন। বই পড়ার পাশাপাশি এখানে খবরের কাগজও পড়ছেন। অনেকেই আবার পাঠাগারের সুন্দর অবয়ব দেখতে এসেছেন। পাঠাগারে ভিতর আলমারিতে সাজানো রয়েছে সারিসারি বই। পাঠাগারে আসা পাঠকেরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই, কেউবা গল্প উপন্যাস, কেউবা জীবনী, কেউ ভালোবাসার গল্প, কেউ বৈজ্ঞানিক কাহিনীসহ বিভিন্ন বই পড়ছেন।
জানা যায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী ও তার সহধর্মিনী ড. জিনাত নবী তাঁদের গ্রামের বাড়ি খামারপাড়া গ্রামে ‘জয় বাংলা পাঠাগার’ নির্মাণ করেন। এই ছোট গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে নিজ উদ্যোগে ‘জয় বাংলা’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। উদ্বোধনের পর থেকেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে পাঠাগারটি।
ড. নুরুন নবী একজন লেখক ও বই পাগল মানুষ। তার প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারের পাশেই রয়েছে একটি প্রাইমারী ও উচ্চ বিদ্যালয়। ওই দুইটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্কুলের পাশাপাশি বই পড়েন সেখানে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় গ্রামের অনেক শিক্ষিত তরুণ, যুবক ও বয়স্ক মানুষসহ পাঠাগারটিকে প্রতিদিন ১৫/২০ জন বই পড়তে আসেন।
মনোরম ও দৃষ্টিনন্দন পাঠাগারে বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা এক হাজারের বেশি। পাঠাগারটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েই বেশি বই সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কবি, সাহিত্যিকের জীবনী, ভালোবাসার গল্প, বৈজ্ঞানিক কাহিনী ও রূপচর্চার বইও রয়েছে। রয়েছে ছোটদের গল্পের বই। বইয়ের পাশাপাশি টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ছবি দিয়ে পাঠাগারটি সাজানো হয়েছে।
সেখানে বই পড়তে আসা তরুণরা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে এতো সুন্দর পাঠাগার হবে এবং তাতে দুষ্প্রাপ্য বই পাওয়া যাবে এটা ভাবিনি। কিছুদিন আগেও গ্রামের ছেলে মেয়েরা মোবাইলে গেমস ও বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়তো। কিন্তু পাঠাগার হওয়াতে ছেলে-মেয়েরা এখন এখানে বই পড়তে আসছে। বই পড়ে জ্ঞান লাভ করা যায়। অনেক বই আছে যেগুলোর নাম কখনো শোনাই হয়নি।
জয় বাংলা পাঠাগারের পরিচালক আশিকুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রতিদিন এই পাঠাগারে প্রায় ২০/২৫জন পাঠক বই পড়তে আসেন। গোপালপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার দত্ত জানান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যারা অবসরে মোবাইলে গেম, গল্পগুজব করে সময় কাটাতো, তারা এখন এই পাঠাগারে এসে বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে। এ পাঠাগারে বই পড়ে নানা শ্রেণির পাঠক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য জানার পাশাপাশি অনেক নামীদামী লেখকের বই পড়তে পারছে। তাছাড়া অনেকেই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে বাড়িতে পড়ছে।
জয় বাংলা পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই পাঠাগারটি করা হয়েছে। আমরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। পাঠাগারটির নাম জয় বাংলা রাখা হয়েছে এইজন্য যে, আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে জানতে পারে ।