মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন প্রায় ১০ বছর পার হয়ে গেলেও নতুনসেম্মেলন হয়নি। ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের পর ১০ বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি দ্বন্দ্বের কারণে।
জানা যায়, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসন। ২০০১ সাল থেকে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত আছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে দলের উপজেলা শাখার সম্মেলন প্রস্তুতি নেয়ার পরও আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ২০১৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে খন্দকার শফিউদ্দিন মনি সভাপতি ও ছরোয়ার আলম খান (আবু খাঁ) সাধারণ সম্পাদক পদে আবারও দায়িত্ব পান। এই দুজন ১৯৯৬ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টিতে নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ব্যতিক্রম শুধু মধুপুর উপজেলা। এ প্রসঙ্গে মধুপুরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, এটি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা। তবে তিনি সব সময় দলের সব দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খানকে। ছরোয়ার আলম খান সম্মেলন করার ব্যাপারে আগ্রহী না থাকায় দীর্ঘদিন এ উপজেলায় সম্মেলন হয়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। চারটি ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন হয়। কিন্তু এর মধ্যে ছরোয়ার আলম খান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কৃষিমন্ত্রী সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।
এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এর পর থেকে কৃষিমন্ত্রীর অনুসারীদের সঙ্গে ছরোয়ার আলম খানের অনুসারীদের তীব্র দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ছরোয়ার আলম খানেরর পক্ষে অবস্থান নেন উপজেলা সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি।
গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। বর্তমানে উপজেলা সম্মেলন নিয়ে নেই দলের মধ্যে কোনো আলোচনা।
কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী অংশের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী জানান, দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তাই বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও তিনি সম্মেলনের উদ্যোগ নেননি। ছরোয়ার আলম খান ও তাঁর অনুসারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই মধুপুরে দীর্ঘদিন উপজেলা সম্মেলন হয় না।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খানের সঙ্গে বারবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনধিরেননি। তবে উপজেলা সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিন মনি বলেন, আমরা সব সময় সম্মেলন করতে চেয়েছি এবং সব সময় প্রস্তুতও ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এসেই অনেকেই নেতা হতে চান। তাই নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন উপজেলা সম্মেলন হয়নি। এবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি।