নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে যে কটি মুসলিম জমিদার বাড়ি এখনও খুব ভালোভাবে দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্যে অন্যতম এই জমিদার বাড়ি দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি । দেলদুয়ার জমিদার বাড়িটি অনেকের কাছে নর্থ হাউজ নামেও পরিচিত । জমিদার বাড়ির জমিদারদের মধ্যে দুজন ছিলেন খুবই আলোচিত, স্বনামধন্য জমিদার । যারা ছিলেন দানবীর, উচ্চশিক্ষিত ও ব্যবসায়ী । তারা হলেন স্যার আবদুল করিম গজনবী এবং স্যার আবদুল হালিম গজনবী ।
আব্দুল হাকিম খান গজনবী ও করিমু নেসা খানম চৌধুরানীর সন্তান ছিলেন তারা দুইজন । তাদের মাতা করিমুন নেসা ছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত ও কবি বেগম রোকেয়ার বোন । তখনকার সময় তারা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত ।
জমিদার স্যার আবদুল করিম গজনবী ১৮৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে পড়ালেখা করেন । ১৮৯৪ সালে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন । এছাড়াও তিনি ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে ব্রিটিশ সরকারের দুইবার মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নাইট ও নবাব বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হন ১৯২৮ ও ১৯৩৩ সালে ।
চারদিকে দেয়ালবেষ্টিত একতলা জমিদার বাড়িটির ভেতরে আছে বিশাল শিশু গাছ এবং নানা জাতের ফুল গাছ, আছে সাদা জাতের কাঠ গোলাপও । সবুজে ঘেরা জমিদার বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান । পূর্ব- দক্ষিণ কোণে রয়েছে একটি মসজিদ । বিশাল তিনটি গম্বুজ মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে আর জমিদার বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে এই অসাধারণ মসদিজটি ।
মসদিজদের সামনে আছে বিশাল পুকুর । জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে আম বাগান এবং বাগানের মাঝখানে রয়েছে টালির শেড ঘর । ধারণা করা হয় এটি ছিল জমিদার বাড়ির নারীদের আড্ডাখানা । জমিদার বাড়িটি কবে বা কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে জানা যায় জমিদারদের পূর্ব পুরুষ আফগানিস্তানের গজনী থেকে দেলদুয়ারে এসেছিলেন ।
জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফতেহদাদ খান গজনবী লোহানি । আফগানিস্তানের গজনী থেকে আসায় তাদের নামের শেষে গজনবী লোহানি খেতাব ব্যবহার করতেন । জমিদার বাড়ির দুইজন আলোচিত সুনামধন্য জমিদার হলেন স্যার আবদুল করিম গজনবী এবং স্যার আবদুল হালিম গজনবী যারা বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত ও কবি বেগম রোকেয়ার বোন করিমু নেসা খানম এবং আব্দুল হাকিম খান গজনবীর সন্তান ।
১৮৭২ সালে জন্ম নেওয়া স্যার আবদুল করিম গজনবী ইংল্যান্ড এবং জার্মানিতে পড়ালেখা করেন । ১৮৯৪ সালে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন । তিনি ব্রিটিশ ভারত শাসনামলে ব্রিটিশ সরকারের দুইবার মন্ত্রী ছিলেন । ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও সমাপ্তি ঘটে ।