কালী দাসের সন্দেশ

জামুর্কীর ঐতিহ্যবাহী ‘ কালী দাসের সন্দেশ ’!

ইতিহাস ও ঐতিহ্য ফিচার মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি : মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কীর ঐতিহ্যবাহী ‘ কালী দাসের সন্দেশ ’- এর নাম শুনলেই যে কারোর জিভে পানি চলে আসে । দেশখ্যাত এই মিষ্টি দেশের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে শিল্প- সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক জগতের খুব কম ব্যক্তিই রয়েছেন যিনি এই সুস্বাদু সন্দেশ না খেয়েছেন ।

 

জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী গ্রামের মদন মোহন সাহা মিষ্টির ব্যবসা করতেন । তার মৃত্যুর পর ছেলে কালী দাস সাহা পৈতৃক পেশায় নিয়োজিত হন । তিনি অন্যান্য মিষ্টির সঙ্গে চিনি এবং পাটালী গুড় দিয়ে দুই প্রকার সন্দেশ তৈরি শুরু করেন । তার তৈরি এই সন্দেশ এতই সুস্বাদু যে, অচিরেই এর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

 

তখন থেকেই জামুর্কীর কালী দাসের এই সন্দেশ হয়ে উঠে প্রসিদ্ধ । কালী দাস সাহা ১৯৮২ সালে পরলোকগমন করেন । পরে কালীদাস সাহার দুই ছেলের মধ্যে বর্তমানে সমর সাহা মিষ্টির ব্যবসায় নিয়োজিত । অপর ছেলে গৌতম সাহা লন্ডন প্রবাসী । ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন চৌচালা টিনের অতি সাধারণ এই দোকান ঘরটিতে সুস্বাদু সন্দেশের জন্য ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে । মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী নামি- দামি ক্রেতাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় থামিয়ে দোকান ঘরে বসে সুস্বাদু এই সন্দেশ খাওয়া এবং পরিবার- পরিজন ও আত্মীয়- স্বজনদের জন্য নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য নিত্যদিনের ঘটনা ।

 

বিগত ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও টাঙ্গাইল যাওয়ার পথে এই দোকান ঘরে বসে সন্দেশ খেয়েছেন । কালী দাস সাহা কাগমারির কাসার দু’টি থালায় পাটালী গুড় এবং চিনির সন্দেশ তাকে উপহার দেন বলে জানান তার ছেলে সমর সাহা ।

 

গত ২০১৩ সালের জুন মাসে বঙ্গবন্ধুর নাতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র পুত্র এবং তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জামুর্কীর জনসভায় বক্তৃতাকালে কালী দাসের এই সন্দেশের প্রশংসা করেছিলেন বলে জানা যায় । নায়ক রাজ রাজ্জাকসহ শিল্প সাহিত্য জগতের খুব কম ব্যক্তিই রয়েছেন, যিনি এই এই সুস্বাদু সন্দেশ না খেয়েছেন ।

 

এছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জামুর্কীর কালী দাসের সন্দেশ উপহার দেন বলে কুমুদিনী হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার রায় জানান । তাছাড়াও মির্জাপুর তথা টাঙ্গাইল এলাকার কেউ ইউরোপ- আমেরিকাসহ বাইরের দেশে গেলে সে দেশে অবস্থানরত আত্মীয়- স্বজনের জন্য এ সন্দেশ নিয়ে যান বলে জানা গেছে ।

 

নারী উদ্যোক্তা ও চেইনশপ তামান্না ফার্মেসির মালিক শিউলী বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে এসে কালী দাসের দোকানে বসে সন্দেশ খেয়ে বাড়ির জন্য নিয়ে গেছেন । ছোটবেলার স্মৃতি ও স্বাদ ফিরে পেতেই তিনি যাওয়া- আসার পথে গাড়ি থামিয়ে সন্দেশ কিনে নিয়ে যান । মালিক সমর সাহা ছাড়াও ছয়জন কর্মচারী রয়েছেন দোকানে ।

সন্দেশ তৈরি করতে প্রতিদিন১৫/১৬ মন দুধ ক্রয় করে থাকেন । সেই দুধের ছানার সঙ্গে চিনি, গুড় এবং এলাচ মিশিয়ে সন্দেশ তৈরি করা হয়ে থাকে । সন্দেশ ছাড়াও তার দোকানে আরও অনেক ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয়ে থাকে । এক কেজি সন্দেশ ৭শ ’ টাকা, চমচম ২২০ টাকা, রসগোল্লা ২২০টাকা, রসমালাই ৪০০টাকা, দই ২২০টাকা, ঘি ১৩০০টাকা এবং কালোজাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে ।

এই সুস্বাদু সন্দেশ সম্পর্কে মালিক সমর সাহা বলেন, বর্তমানে ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়ক ফোর লেন ও সড়ক বিভাজন হয়েছে । দোকানের সামনেই আন্ডারপাস নির্মাণ হওয়ায় মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের সন্দেশ কিনতে খানিকটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয় । এতে বেচাবিক্রি কিছুটা কমেছে । তিনি আরো বলেন, আমাদের সততা এবং ঐশ্বরিক অবদানই এর মাহাত্ম্য ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *