ভূঞাপুর প্রতিনিধি: দেশীয় চলচ্চিত্রের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কোনো কমতি নেই; সুযোগ পেলেই বিনোদনপ্রেমীরা ছুটে যান সিনেমা হলে। যার প্রমাণ পাওয়া গেল ভূঞাপুর উপজেলায়। ভূঞাপুরে কোন সিনেমা হল না থাকায় পৌর মিলনায়তনকে অস্থায়ী সিনেমা হল বানিয়ে প্রদর্শিত হচ্ছে ছোট পর্দার বড় নায়ক আফরান নিশোর সুড়ঙ্গ।
আফরান নিশোর বাড়ি ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের ভারই গ্রামে। নিজ এলাকার মানুষ হল না থাকায় বঞ্চিত হবে তা মানতে পারছিলেন না ভক্তরা। তাই ভূঞাপুর পৌর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পৌর মিলনায়তনকে ভক্তরা বানিয়ে ফেললেন অস্থায়ী সিনেমা হল। ঈদের প্রথম দিনের শো থেকেই চতুর্থ দিন সোমবার পর্যন্ত টানা হাউস ফুল অস্থায়ী সিনেমা হল। ভিড় ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের। দর্শকরাও হলের আবহে প্রিয় তারকার সিনেমা দেখতে পেয়ে খুশি। আয়োজক ও দর্শকরা স্থায়ী হল নির্মাণের দাবি জানান।
জানা যায়, একসময়ে টাঙ্গাইল জেলার মানুষের সুস্থ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। ১৯৯০ সালে জেলায় মোট ৫১টি সিনেমা হল ছিল। এসব হলে ৫টি শিফটে সিনেমা প্রদর্শন করা হতো। শহর থেকে শুরু করে হাটে-বাজারে পোস্টার ও মাইকিং করে সিনেমার নাম প্রচার করা হতো দিন-রাত। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে সিনেমা হলের সামনে উপচেপড়া ভিড় থাকত। এরপর দর্শকের অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যায় সবকটি সিনেমা হল। শহরের ৫টি সিনেমা হলের মধ্যে রওশন, রূপবাণী, রূপসী, কেয়া ও মালঞ্চ ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের বিনোদনের শেষ সিনেমা মালঞ্চ হলও ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভাঙার কাজ শুরু করে; বর্তমানে এখানে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে।
সরেজমিনে ভূঞাপুরের অস্থায়ী সিনেমা হলে দেখা যায়, সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা সিনেমা দেখতে হলে এসেছেন। যথাসময়েই সিনেমা শুরু হয়েছে। ঈদের চতুর্থ দিনেও কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে সিনেমা হল।
আয়োজকরা জানায়, ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পায় সুড়ঙ্গ। তবে বৃষ্টির কারণে দর্শকরা ঠিকমতো আসতে পারেনি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে ৪টি করে শো চলছে। ঝুঁকি জেনেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রেক্ষাগৃহের আদলে এই সিনেমা দেখানোর জন্যই পৌরসভার ‘স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তন’ ভাড়া করে আমরা ১২জন সদস্য মিলে অস্থায়ী সিনেমা হল প্রস্তুত করি।
দর্শনার্থী ভূঞাপুরের হাসান বলেন, নিশো ফ্যান গ্রুপের পক্ষ থেকে আমি অন্যদের জন্য ৪৫টি টিকিট কিনেছি। নিশো ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রতিনিয়তই যোগাযোগ রয়েছে । আরেক দর্শনার্থী অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে সুড়ঙ্গ সিনেমা দেখতে এসেছি। সিনেমা দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। আফরান নিশোর আরও সাফল্য কামনা করছি। বর্তমানে টাঙ্গাইলে কোনো সিনেমা হলে নেই। স্থায়ীভাবে সিনেমা হল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি আমরা ।
ভূঞাপুরে সিনেমা হল পরিচালনার প্রধান জহুরুল চকদার বলেন, সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। টাঙ্গাইলে অস্থায়ী সিনেমা হলে বৃষ্টির মধ্যেও যেভাবে দর্শক সুড়ঙ্গ সিনেমা দেখতে ভিড় করছে, তাতে দর্শকদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা ১২জন মিলে এই অস্থায়ী হল করেছি। ব্যবসার জন্য চিন্তা করে নয়, এটি জেলার মানুষকে সুস্থ বিনোদনের কথা চিন্তা করেই করা হয়েছে। তাছাড়া নিশো ভাই আমাদের এলাকার ছেলে, তার ভালো একটি সিনেমা আমাদের টাঙ্গাইলের মানুষ দেখতে পারবে না এটি তো হয় না। প্রতিদিন প্রায় সাত থেকে ৮০০ টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যার প্রতিটির মূল্য একশ টাকা।
তিনি আরও বলেন, এখন ভালো সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। মানুষ দেখতে ভিড়ও জমাচ্ছে। কাজেই শিক্ষিত ও পেশাদাররা এগিয়ে এলে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মিত হলে, সরকার আধুনিক সিনেমা হল নির্মাণে আন্তরিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করলে এ দেশে আবারও সিনেমা শিল্পের প্রসার ঘটবে।