নিজস্ব প্রতিবেদক: এলেঙ্গার মোঃ সাদ্দাম হোসেন নামে মোবাইল ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে। পরিবারের দাবি, বন্ধুরা সাদ্দামকে হত্যা করে মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে যায়। হত্যার পর বন্ধুরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। পুলিশও ধারণা করেছে, এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে।
জানা যায়, সাদ্দাম হোসেন (২৮) টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে। তিনি পাশ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গাতে মুঠোফোনের দোকান করতেন। রোববার রাতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়া শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
তার পরিবারের সদস্যরা জানায়, রবিবার সকালে সাদ্দাম দোকানে যায়। ওই দিন বিকেলে এলেঙ্গা রাজাবাড়ী এলাকার তার বন্ধু রাব্বি, অমিত, লিসান, বাপ্পীসহ ছয়বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেলে বগুড়াতে ঈদ পরবর্তী ঘুরতে বের হয়। রাতে পরিবারের সদস্যরা খবর পান সাদ্দাম অসুস্থ। তার কিছুক্ষণ পর খবর পান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সাদ্দামের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমি সাদ্দামকে ফোন দেয়ার পর সে আমাকে বলে রাব্বি ও লিসানদের সাথে ঘুরতে আসছি। তারা আমাকে মেরে ফেলছে। তুমি আমাকে বাঁচাও। তারপর ওরা ফোন নিয়ে যায়। তারপর বারবার ফোন দেওয়ার পরও সাদ্দামের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আমার স্বামীকে ওরা হত্যা করেছে। ঘটনার পর রাব্বি, বাপ্পী কেউ যোগাযোগ করেনি। ওদের ফোন নম্বর বন্ধ ছিল। যারা আমাকে বিধবা করেছে ও ছেলেকে এতিম করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
সাদ্দামের মা জোৎন্সা বেগম বলেন, লিসান, রাব্বী আমার ছেলের দোকানে ও আমার বাড়িতেও প্রতিনিয়ত আসতো। ওরাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। এক্সিডেন্ট হলে শরীরে পোশাক থাকতো। কিন্তু সাদ্দাম বিবস্ত্র ছিলো। ঘটনাস্থলেও এক্সিডেন্টের কোন নমুনা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘটনাটি দুর্ঘটনার নাটক করছে। আমি শুনছি রাব্বি, লিসান ওরা পলাতক রয়েছে। ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
সাদ্দাম হোসেনের প্রতিবেশি বাবলু মিয়া জানান, টাঙ্গাইল থেকে আমরা লাশ নিতে শেরপুর এসেছি। মামলা করে বাড়ি ফিরবো। গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, এটা কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা না। এটি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছি। দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেনের বন্ধু রাব্বির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে । শেরপুর হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ডে ফ্লাইওভারের নিচে বিবস্ত্র অবস্থায় যুবকটিকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তখন তিনি আল্লাহ আল্লাহ করছিলেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত ওই যুবকটিকে উদ্ধার করে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, যুবকটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ মাঠে কাজ শুরু করেছেন। আসলে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে না-কি তাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়রা জানায়, গাড়ীদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকার ফ্লাইওভারের পাশে কেউ সাদ্দামকে ফেলে রেখে যায়। বিষয়টি জানার পর নয় মাইল এলাকায় গিয়ে দোকানদারদের সাথে কথা বলি। দোকানদারদের বিষয়টি বলার পর তারা জানায়, এখানে একটা কাহিনী আছে। তিনটি মোটরসাইকেলে পাঁচজন এসে বলে আমাদের মোটরসাইকেল থেকে এক বন্ধু পড়ে গেছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। পরে সকলে মিলে সাদ্দামকে খোঁজাখুঁজি করে।
স্থানীয়দের কাছে মোবাইল নম্বর দিয়ে সাদ্দামের খোঁজ পাওয়ার বন্ধুদের মোবাইলে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে তাদের নম্বর সংগ্রহ করে রাব্বি নামের এক বন্ধুকে ফোন করে আসতে বলি। রাব্বি বলেন, আমরা যমুনা সেতুর কাছে চলে আসছি। কথা বলে বুঝলাম তারা সাদ্দামের প্রতি অনুতপ্ত নয়। বন্ধুদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করার পর তারা বলেন, আমরা যমুনা সেতু পার হয়েছি। তারা ফেরত আসতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। সন্দেহজনক বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করি।
তিনি আরও বলেন, এটা যদি আসলেও সড়ক দুর্ঘটনা হতো তাহলে তারা স্থানীয় থানাকে বা ৯৯৯ ফোন করে অবগত করতো। সড়কের সিসি টিভির ফুটেজেও দুর্ঘটনার কোন দৃশ্য দেখা যায়নি। এটা এক্সিডেন্টের মতো মনে হয় না। এখানে কিছু একটা থাকতে পারে। বন্ধুরা নাটক সাজাতে পারে ।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবু কুমার সাহা জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সাদ্দাম হোসেনের ময়না তদন্ত হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।