সময়তরঙ্গ ডেক্স: টাঙ্গাইলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় বা সড়কের পাশে কোনও রকমে আশ্রয় নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ভিটেবাড়ি হারিয়ে এখন নিঃস্ব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পড়েছেন চরম বিপাকে।
সরেজমিনে ভূঞাপুরের চিতুলিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহে গ্রামের শতাধিক পরিবার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছে। অনেকেই পাশের সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। আবার অনেকেই ঘরবাড়ি সরাতে ব্যস্ত। এসব পরিবারের মাঝে ঈদের কোন আনন্দ ছিল না।
চিতুলিয়াপাড়া গ্রামের জিলকদ আলী বলেন, একসময় আমার বাড়িটি যমুনা নদী থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল। কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ভাঙনে আমার বাড়িটিও গত শুক্রবার নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে থাকার জায়গাটুকুও নেই। যার ভিটেবাড়ি নেই তার কষ্টের সীমা নেই।
একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত মগরব আলী বলেন, চোখের সামনে রাতের মধ্যে নদীতে ঘরবাড়ি চলে গেছে। টিউবওয়েলটিও রক্ষা করতে পারিনি। কিছু জিনিসপত্র বাঁচিয়েছিলাম, সেগুলো স্বামী-স্ত্রী মিলে সরিয়ে নিচ্ছি। ঘরে খাবার নেই। কয়েকদিন আগে মেয়েটাও মারা গেছে। এখন আমাদের কেউ দেখার নেই ।
একই গ্রামের হনুফা বেগম বেগম বলেন, আমার চোখের সামনেই বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে ভাঙনের পর পাশের সড়কের উঁচু জায়গায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছি। আমাদের থাকার জায়গাটুকু নেই। নিজের ভিটেবাড়ি হারিয়ে গেছে । আমরা সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি। সেটাতেও ভাঙনে ফাটল ধরছে।
এদিকে, যমুনা নদীতে ক্রমেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নাগরপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাগরপুরে ধুবরিয়া ও সলিমাবাদ এবং ভূঞাপুরে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়াপাড়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। সলিমাবাদের পরিত্যক্ত ঘোষণা করা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ভাঙনের শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হলেও কোনও জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজ নেননি। এ ছাড়া প্রশাসন থেকেও সহায়তা দেওয়া হয়নি। পূর্বে সমাজবদ্ধভাবে ঈদ পালন করলেও এবার সেই ঈদ করতে পারেননি তারা। নদীর ভাঙনের সঙ্গে সমাজও ভেঙে গেছে।
জানা যায়, ভূঞাপুরে যমুনা নদী ক্রমেই ভেঙে পূর্বদিকে ধাবিত হয়ে পশ্চিম দিকে চর জাগছে। ভাঙনের ফলে অনেকেই বাস্তুহারা হয়েছেন। কেউ বা আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে, কেউ আবার সড়কের ওপর ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, ইতোমধ্যে ভাঙনে একটি গ্রামের শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছেন। দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ শুরু না করলে মাটিকাটা থেকে কষ্টাপাড়া পর্যন্ত যে বাঁধ রয়েছে সেটি রক্ষা করা যাবে না। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান।
ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জেলার নাগরপুর ও ভূঞাপুরে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভূঞাপুরে জিওব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। নাগরপুরে আমাদের কোনও প্রকল্প নেওয়া হয়নি। তবে এডিবির আওতায় নাগরপুরে চার কিলোমিটার অংশে জিওব্যাগ প্রতিরক্ষামূলক একটা কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।