মির্জাপুরে নদীভাঙন অব্যাহত

মির্জাপুরে নদীভাঙন অব্যাহত: দোকান-ঘরবাড়ী বিলীন

পরিবেশ ফিচার মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুরে নদী ভাঙন পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ঝিনাই নদীর ভাঙনে আরও ২০টি দোকানঘরসহ ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

 

জানা যায়, ফতেপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফতেপুর। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দোকানপাট ও গৃহহারা পরিবারগুলো।

 

এলাকাবাসী জানায়, গত ২০ জুন ওই এলাকায় ঝিনাই নদীর ভাঙন শুরু হয়। এর তিনদিন পর ফতেপুরের শতাব্দী প্রাচীন বাজারের পূর্ব অংশে শুরু হয় ব্যাপক ভাঙন। ফলে বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ১৮টি বাড়ির অর্ধশত ঘর ও ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কের কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে যায়। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান।

 

ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুরণী-ফতেপুর পাকা সড়কের হিলড়া বাজার এলাকার বেশ কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে এলাকার উত্তরাংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো সর্বশেষ খবর পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা পাননি।

 

ফতেপুরের গ্রামের স্বপন পাল জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শুকনো মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বানকাটা ও ফতেপুর পালপাড়ার পাকা রাস্তাও ভেঙে নদীতে চলে গেছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পালপাড়া সংলগ্ন সৌদি আরব প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী জীবনের অর্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে সম্প্রতি বাড়িটি করেছি। মুহূর্তের মধ্যে ঝিনাই নদীতে সব চলে গেছে। এই বয়সে আর অর্থ উপার্জন করে বাড়ি করা সম্ভব নয়।

নদীভাঙনে গৃহহারা পালপাড়ার জিতেন পাল বলেন, ছোট একটি ছাপড়া ছাড়া বাড়ির পুরো অংশই ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কোনো সহায়তা দেননি।

গত সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ওই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা বাজারের পূর্বপাশের ৫০ মিটার এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সোমবার (৩ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ প্রসঙ্গে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানান , ঝিনাই নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে ক্ষতিস্তদের তালিকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সাংসদ খান আহমেদ শুভ ফতেপুরের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা এবং নদীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *