নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নৌকা তৈরির কাজ। আর জেলার বিভিন্ন স্থানের হাট-বাজারে এ নৌকা বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরির কারিগররা।
স্থানীয়রা জানায়, মধুপুর ছাড়া জেলার বাকি ১১ উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে নৌকার প্রয়োজন হয়। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা তৈরির কাঠমিস্ত্রি (সুতার) ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। দিনরাত কাঠ চিরানো, তক্তা ও গুঁড়া বানানো, কাঠ মসৃণ করা, তাঁরকাটা (ছোট লোহা) ও পাতাম (লোহার পাত) দিয়ে তক্তা জোড়া লাগানো ইত্যাদি কাজে কাঠমিস্ত্রিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাজগুলো তারা বাড়ি বা নৌকার হাটগুলোর কাছাকাছি স্থানে সাধারণত করে থাকেন।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরপৌলি, মাহমুদনগর, ছিলিমপুর ও ওমরপুর; নাগরপুরের গয়হাটা ও চরসলিমাবাদ; মির্জাপুরের বরাটি, ছাওয়ালি মহেড়া ও চাকলেশ্বর; কালিহাতীর রামপুর, আউলিয়াবাদ ও কস্তুরিপাড়া; বাসাইলের মিরিকপুর, কাউলজানী, রাশড়া করিম বাজার ও ফুলকি; সখীপুরের দাড়িয়াপুর ও বহেড়াতৈল; ধনবাড়ীর পাইস্কা ও কেরামজানী; গোপালপুরের মোহনপুর, নলীন বাজার, নবগ্রাম ও চাতুটিয়া; ঘাটাইলে কদমতলী ও হামিদপুর, ভূঞাপুরের ফলদা, গোবিন্দাসী, কুঠিবয়ড়া ও অর্জুনা এবং দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ,লাউহাটি ও ফাজিলহাটে নৌকা বিক্রি হয়।
নৌকার মিস্ত্রি বলরাম সূত্রধর, স্বপন সূত্রধর, পলাশ সূত্রধর জানান, প্রায় প্রত্যেক এলাকার বড় রাস্তা এখন পাকা হয়েছে। ফলে দূরের যাত্রার জন্য কেউ বড় নৌকা তৈরি করে না। বর্ষায় এ পাড়া থেকে ও পাড়াতে যাতায়াতের জন্য সবসময় ছোট ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়।
তারা আরো জানান, বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে তাদের সংসার চলে। তারা ছোট সময় থেকে বাপ-দাদার কাছে হাতেখড়ি নিয়েছেন। কাঠমিস্ত্রির কাজ করা তাদের নেশা ও পেশা। একটি নৌকা তৈরিতে তিনজনের দুই-তিনদিন সময় লাগে তাদের।
বাসাইলের মিরিকপুর গ্রামের মৃত নেপাল সূত্রধরের ছেলে প্রফুল্ল সূত্রধর বলেন, আমি রাশড়া করিম বাজারে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করি। আমার সঙ্গে আরও দুজন কাজ করছেন। তারাও ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্ষায় নৌকা তৈরি করি। শুকনো মৌসুমে ঘর, খাট, চেয়ার, টেবিল ড্রেসিং টেবিল, আলনা, আলমারি তৈরি করে হাটে বিক্রি করি। বর্ষা মৌসুমে নৌকার কদর বেড়ে যায়। তাই এসময় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ৮-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। সময় লাগে দু-তিনদিন। হাটে একটি ছোট নৌকা ১০-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
কাঠমিস্ত্রি রমেন স্যানাল বলেন, চুক্তিতে নৌকা তৈরির কাজ করে প্রতিদিন ৭০০-১০০০ টাকা মজুরি পাই। বর্ষার সময় এলে আয়-রোজগার ভালোই হয়। শুকনো মৌসুমে সংসারের টুকিটাকি আর কৃষিকাজ করে থাকি। তিনি আরো বলেন, প্রায় ৩০ বছরের বাপ-দাদার পেশায় আছি। বর্ষার সময় নৌকা তৈরি ও অন্য সময় ঘর তৈরির কাজ করি। বর্ষা মৌসুমে নৌকার খুবই কদর থাকে। এ সময় নৌকার কাজ বেশি করি।
নৌকা তৈরির কারিগর রায়হান মিয়া, জসিম ভূইয়া জানান, সারা বছর তারা এক প্রকার বেকার থাকেন। কিন্তু চৈত্র থেকে শ্রাবণ- এই পাঁচ মাস তারা নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী চার থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে নৌকাগুলো তৈরি করে থাকেন। গুণগতমান ভালো এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের কাছে এখানকার নৌকার কদর বেশি।
টাঙ্গাইল বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) শাহনাজ বেগম বলেন, অতিবৃষ্টি ও নদীর জোয়ারে পানি বাড়ায় বর্তমানে নৌকার চাহিদা বেড়েছে। নৌকার কারিগরা কেউ সহযোগিতার দাবি নিয়ে আসেনি। তবে আবেদন করলে নৌকার কারিগরদের সরকারিভাবে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।