ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় হাটে চামড়া আছে: ক্রেতা নেই

ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় হাটে চামড়া আছে: ক্রেতা নেই

অর্থনীতি কৃষি ঘাটাইল ফিচার

ঘাটাইল প্রতিনিধি: জেলার বৃহত্তর চামড়ার হাট ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ায় বিপুল পরিমাণ চামড়া আমদানি হলেও ক্রেতা নেই। আড়ৎদাররা যে দাম বলছেন তাতে লোকসান হবে বলে বিক্রি করেননি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। তারা চামড়া পরের হাটের জন্য রেখে দিয়েছেন। রবিবার দিনভর হাটে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

 

জানা যায়, জেলায় কোরবানির পশুর চামড়া ফুট হিসেবে নয়, পিস হিসেবে বেচাকেনা হয়ে থাকে। সপ্তাহে রবিবার ও বুধবারে বসা পাকুটিয়ার হাটে সাধারণত কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। এবার মাঠ পর্যায়ে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনে ফড়িয়ারা হাটে উঠিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হতে দেখা যায়নি। গরুর চামড়ার সাথে ফ্রি নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কোনো স্থানে ছাগলের বড় চামড়া ১০-২০ টাকায় কেনা হচ্ছে। তবে ছোট চামড়া ফেলে দিতে দেখা গেছে।

 

মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রামে গ্রামে গিয়ে সামাজিকভাবে কোরবানি দেওয়া গরুর চামড়া প্রতিপিস ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কেনা হয়েছে। সেগুলো ধুয়ে লবন মাখিয়ে পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে রবিবার, ২ জুলাই সকালে উঠানো হয়। বৃষ্টির কারণে লবণ দেওয়া চামড়াগুলো শুকানো যায়নি। কোরবানির পর প্রথম হাট হওয়ায় অধিকাংশ বেপারী পাকুটিয়ার হাট থেকে রবিবার চামড়া কিনেননি। ২-৪ জন বেপারী মাঝারি আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনেছেন। তারা জানান, প্রতি পিস ২০০-৫০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ দেওয়ার পরও ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করলে লোকশান হবে। তাই বিক্রি না করে আবারও লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে আড়তদারদের কাছে বা পরের বুধবার, ৫ জুলাই বা রবিবার, ৯ জুলাই পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে আবার উঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া ছাগলের চামড়ার কোনো আড়তদার হাটে আসেনি। ফলে বড় আকারের ছাগলের ১০০টি চামড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।

 

জানা যায়, ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ও পরদিন শুক্রবার জেলায় ৬০-৬৫ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে লবণ দিয়ে পাকুটিয়া হাটে নেওয়া হয়। রবিবার, ২ জুলাই পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে অধিকাংশ চামড়া বিক্রি না হওয়ায় আড়তে এনে আবার লবণ মাখিয়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে সেগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানো হবে।

 

 

মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, তিনি গ্রামাঞ্চল থেকে মাঝারি আকারের ৬০টি গরুর চামড়া প্রতিপিস ৪৫০টাকা দরে কিনে লবণ দিয়েছেন। রোদ না থাকায় শুকানো যাচ্ছে না। বিক্রি করতে চাইলে প্রতি পিস ৫০০ টাকা দাম করা হয়েছে । এতে তার লোকশান হবে।

অপর মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী মোস্তফা জামান বলেন, তিনি বড় আকারের ১২ পিস চামড়া ৮০০ টাকা দরে কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ মাখান। পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে উঠানোর পর পাইকাররা প্রতি পিস ৯০০ টাকা দাম করছেন। প্রতি পিস ১২শত টাকার কমে বিক্রি করলেও লোকশান হবে।

আড়তদার আহাম্মদ আলী ও আলী হোসেন বলেন, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা, যা গতবার ছিল ৪০-৪৪ টাকা। তবে গরুর চামড়ার দাম বাড়লেও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা আর বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকায় অপরিবর্তিত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু জেলায় বর্গফুট নয়, পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়। ফড়িয়ারা মাঠ পর্যায় থেকে যে মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছে তাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তারা ইচ্ছে করলেও সরকারিভাবে বেধে দেওয়া দামের বেশি দিয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না।

জানা যায়, জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানির মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৫৮১টি ছাগল ও চার হাজার ৪১টি ভেড়া কোরবানি হয়েছে। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, এরমধ্যে ছাগলের চামড়া ৬০-৬৫ হাজার বেচাকেনা হয়েছে। অন্যগুলো মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার সাথে ফ্রি অথবা ফেলে দিতে হয়েছে। ভেড়ার চামড়া ২০-২৫টি সংগ্রহ করা গেলেও অন্যগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা বড় ধরণের মুনাফা করার আশায় থাকলেও গত কয়েক বছর যাবত তা হচ্ছে না। তবুও আশায় থাকেন তারা।

পাকুটিয়া চামড়ার হাটের ইজারাদার রাকিব খান জানান, এবছর প্রায় ৩২ লাখ টাকায় হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোরবানির প্রথম হাট হিসেবে চামড়ার আমদানি হলেও বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। ফড়িয়ারা কিছু চামড়া কিনে বিক্রি করতে না পেরে হাটের গোডাউনে লবণ দিয়ে স্তুপ করে গেছেন। হাটে বেশিরভাগ আড়তদার আসেনি। প্রায় হাটেই ঢাকা থেকে কোম্পানী বা ট্যানারির যে প্রতিনিধি আসেন তারাও আসেননি। মনে হচ্ছে গত বছরের ন্যায় এবারও ফড়িয়ারা লোকসানের কবলে পড়বে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রানা মিয়া জানান, জেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানি হয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৬৪১টি। এ বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখভাল করে থাকেন। সঠিকভাবে পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য কোরবানিদাতাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও জবেহকৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়াতে অনেকের ত্রুটি-বিচ্যূতি হয়ে থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *