আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা

আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা সেই কিশোরী মা হলেন

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর ফিচার রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা ধর্ষণ মামলার বাদী সেই কিশোরী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল শহরের ব্যুরো হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশন হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কিশোরীর সন্তান প্রসব করানো হয়। হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক মালেকা সফি ওই কিশোরীর সিজারিয়ান অপারেশন করেন।

 

গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই এবং জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব। কিশোরীর দায়ের করা মামলায় বড় মনির উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত ১৫ মে জামিন চেয়ে নিম্ন আদালতে হাজির হন। আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। ওই দিন রাতে তিনি অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে তিনি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালেই আছেন বলে জানা গেছে।

 

এদিকে ব্যুরো হাসপাতালের কাগজপত্রে বাবার নাম ‘সৌরভ’ লেখা আছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সবার দাবি, তাহলে এই শিশুর প্রকৃত বাবা কে? এ বিষয়ে ওই কিশোরী জানিয়েছেন, ভর্তির দিন তিনি অসুস্থ থাকায় ও তার পাশে পরিবারের কেউ না থাকায় পিতার নাম ভুল লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই শিশুর পিতার নাম গোলাম কিবরিয়া বড় মনি হবে। এ সময় কিশোরী বড় মনির শাস্তি দাবি করেন।

 

কিশোরী বলেন, সিজারের সময় স্বজনরা কেউ পাশে ছিলো না। তাই আমাদের পারিবারিক চিকিৎসক মেডিকেল স্টুডেন্ট সৌরভ আমার সিজারের সময় অভিভাবক হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের কাগজপত্রে বন্ডসহি (মুচলেকা) দেন। প্রকৃতপক্ষে আমার এই শিশুর বাবা গোলাম কিবরিয়া বড় মনি।

হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, ওই কিশোরী বুধবার বিকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সার্জন মালেকা শফি সিজারিয়ান অপারেশন করেন। নবজাতককে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হয়েছে।

ডা. মালেকা শফি মঞ্জু বলেন, বর্তমানে ওই কিশোরী সুস্থ রয়েছেন। তবে নবজাতকটি কিছুটা অসুস্থ থাকায় এনআইসিওতে রাখা হয়েছে। ওই কিশোরী আমাদের দ্রুত সিজার করতে বলেন। তিনি ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবর্তী ছিলেন।

জানা যায়, কিশোরী গত ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় করা মামলায় অভিযোগ করেন, গোলাম কিবরিয়া গত বছর ১৭ ডিসেম্বর তাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। পরে গত ২৯ মার্চ তার (বড় মনি) শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে মারপিট করা হয় এবং বড় মনি তাকে আবার ধর্ষণ করেন। মামলায় বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে আছেন।

এ মামলাকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল সমাবেশ হয়। মামলা করার পর সংসদ সদস্য ছোট মনির সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ওই কিশোরীকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম মিয়া জানান, মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। এরপরও বর্তমানে টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশ নবজাতকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দায়িত্ব পালন করছে।

টাঙ্গাইল পিবিআই-এর পুলিশ সুপার মোঃ সিরাজ আমীন জানান, ওই কিশোরীর সন্তান জন্মদানের খবর তারা পেয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে যা যা প্রয়োজন সব করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *