নাগরপুরে-যমুনার-ভাঙনে-নতুন-করে-আড়াই-শতাধিক-পরিবার-গৃহহীন

নাগরপুরে যমুনার ভাঙনে নতুন করে আড়াই শতাধিক পরিবার গৃহহীন

নাগরপুর পরিবেশ ফিচার

নাগরপুর প্রতিনিধি: নাগরপুর উপজেলায় নতুন করে আবার যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বছর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের আড়াই শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গৃহহীন মানুষ আশপাশের এলাকায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিরক্ষা দেয়াল (গাইড ওয়াল) নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সূত্রে জানা যায়, এবার নাগরপুরে ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো হচ্ছে সলিমাবাদ ইউনিয়নের পশ্চিম সলিমাবাদ, পশ্চিম তেবাড়িয়া, খাস ঘুনিপাড়া, পাইকশা মাইজাইল; ধুবড়িয়া ইউনিয়নের বলরামপুর, বাদে কাকনা ও কৃষ্ণ দিয়ার কুল; দপ্তিয়র ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, টাটি নিশ্চিন্তপুর, ফয়েজপুর, বাককাটারি, বাজুয়ার টেক ও ছিটকি বাড়ি। দেড় মাস ধরে নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।

 

গত বুধবার সরেজমিন সলিমাবাদ ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চলে এসেছে। বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবনের নিচের কিছু অংশের মাটি ধসে গেছে। যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়তে পারে। ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের আশপাশে ভাঙনকবলিত কিছু পরিবার অস্থায়ী ঘর তুলে অবস্থান করছে।

 

সেখানে আশ্রয় নেওয়া পশ্চিম সলিমাবাদের আবদুল আউয়াল মোল্লা জানান, কয়েক বছরের পরপর ভাঙনে তিনি জমিজমা সবই হারিয়েছেন। এবার তার বসতবাড়িও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর মতো অনেক পরিবার সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

পশ্চিম সলিমাবাদ গ্রামের মজিদা খাতুনের স্বামী এখন ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালান। তার বাড়ি পাঁচবার নদীগর্ভে হারিয়ে তিনি নিঃস্বপ্রায়। সব হারানো মজিদা খাতুন বলেন, নদী আর যেন না ভাঙে, তার জন্য একটা সমাধান চাই।

চর সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবদুস সামাদ বলেন, নদী দুই মাস আগেও স্কুল থেকে অনেক দূরে ছিল। এবার ভাঙতে ভাঙতে প্রায় স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে। শীঘ্রই প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ না করলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এ এলাকা।

সলিমাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের আড়াই শতাধিক পরিবার সম্প্রতি ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়েছেন। এছাড়া চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার খানেক মানুষ। প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনে নতুন করে মানুষ গৃহহীন হচ্ছেন। এখানে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া আশু দরকার।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সলিমাবাদ ও ধুবরিয়া ইউনিয়নে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। বন্যা মৌসুম পার হওয়ার পর এই প্রকল্পের আওতায় নাগরপুর অংশের কাজ শুরু করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *