নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ উল আজহা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চাকু, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটাকাটিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারপল্লীর বাসিন্দারা। টুংটাং শব্দে দিনরাত ব্যস্ততা শুরু হয়েছে তাদের। তবে কয়লা, লোহা ও শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় কপালে চিন্তার ছাপ পড়েছে এ পেশায় জড়িতদের।
সরেজমিন শহরের পার্ক বাজার, বেবিস্ট্যান্ড, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড গোডাউন ব্রিজ, কুমুদিনী কলেজ গেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঈদকে কেন্দ্র করে গমগমে আগুনে লোহা লাল করায় ব্যস্ত বেশির ভাগ কামার। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজে তাদের দম ফেলারও সময় নেই। সবাই কোরবানির পশু জবাই করার দা, বটি, ছুরি, চাপাতিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে শহরের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের মাংস কাটাকাটির উপকরণ কিনতে কামারদের কাছে ভিড় করতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেকেই কামারদের কাছে পুরাতন উপকরণ মেরামতের জন্যও নিয়ে আসছেন। দর কষাকষি চলে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে।
পার্ক বাজারের কামাররা জানান, স্বাভাবিক সময়ে তাদের তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কয়লা, লোহা ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকরণেরও দাম বেড়েছে। বর্তমানে পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা, দা ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, চাপাতি ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কামাররা আরো জানান, স্বাভাবিক সময়ে যেসব দোকানে দুইজন করে শ্রমিক কাজ করতো, এখন সে সব দোকানে ৫-৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। শহরের কলেজপাড়া এলাকার শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে যে চাপাতির দাম ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, ঈদ উপলক্ষে সেই চাপাতি কিনেছি ৮৫০ টাকা দিয়ে। এছাড়াও পুরাতন দা ও ছুরি শাণ করানোর মজুরি আগের চেয়ে বেশি নিয়েছে কামাররা।
থানাপাড়া এলাকার আঃ ছালাম বলেন, এবছর একটি গরু জবাই করার ছুরি ৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা জানান, লোহার দাম বেশি হওয়ায় সকল উপকরণের দামও বেড়েছে। বিশ্বাস বেতকা এলাকার শামছুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগেও যে ছুরি ৫০ থেকে ৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এ বছর সেই ছুরি ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।
পার্ক বাজার এলাকার কামার কোমল চন্দ্র কর বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বর্তমানে আমাদের কাজের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। এছাড়াও উপকরণের দামও বেড়েছে। উপকরণের দাম ও আমাদের মজুরি বাড়ার কারণ হচ্ছে আগে এক বস্তা কয়লার দাম ছিলো সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। সেই কয়লার দাম বর্তমানে ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়াও আগে এক কেজি লোহার দাম ছিলো ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বর্তমানে সেই লোহার দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
অপর কামার প্রভাত ধর বলেন, ঈদের সময় এগিয়ে আসায় আমাদের কাজও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের আগে দিন রাত দিন ২৪ ঘণ্টা আমাদের কাজ করতে হবে। কামারের তৈরি করা পণ্য বিক্রেতা সত্যরঞ্জন বলেন, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকরণের দাম বেড়েছে। এটি অনেক ক্রেতাই বোঝেন না। অনেক ক্রেতাই না বুঝে কথা কাটাকাটি করে।
বিশ্বাস বেতকার স্বপন কর্মকার নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, বহু বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। ভিন্ন কিছু করার অভিজ্ঞতা না থাকায় কামারের পেশায়ই পড়ে রয়েছি। সময়ের সাথে সবকিছুর দাম বেড়েছে, মানও বেড়েছে। তবে আমাদের এ কাজে জড়িতদের মান বাড়েনি। সারাবছর যেমন তাদের কাজ ছিল, এখনো সেরকমই রয়েছে। এক কথায় কোরবানির এ সময়টায় কামারপল্লীর ব্যস্ততা বাড়লেও পুরোনো সেই জৌলুস এখন আর নেই।