দেলদুয়ার প্রতিনিধি: দেলদুয়ারের কলেজ ছাত্রী হামিদা আক্তারের পালন করা সেই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় ‘মানিক’ এবারের ঈদ উল আজহায় বিক্রির জন্য ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে। গত বছর ৪৫ মণের মানিকের ওজন এবার ৫২ মণ। মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।
এ বছরও বিশালাকৃতির এই গরু বিক্রি করা নিয়ে হামিদা আক্তার দুশ্চিন্তায় পড়লেও প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলার সব্বোর্চ বড় গরুটি বিক্রি করতে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্রেতার খোঁজ করা হচ্ছে।
জানা যায়, হামিদা আক্তার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদের মেয়ে। গত কোরবানির ঈদে ষাঁড়টি বিক্রির পরিকল্পনা থাকলেও সঠিক ক্রেতা না মেলায় পশুটি বিক্রি করতে পারেননি তিনি। সেবার ঈদে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির দাম হাঁকা হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা।
হামিদা আক্তাররা তিন বোন। ভাই না থাকায় সংসারের হাল ধরতে হয়েছে হামিদাকেই। টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স পাশ করেছেন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়িতেই একটি মুদি দোকান করেছেন। সেখানে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ ও দর্জির কাজ করেন তিনি।
হামিদা আক্তার নিজ উপার্জনের বড় অংশই ব্যয় করেছেন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় মানিকের পেছনে। তার খামারে কয়েকটি গরুর মধ্যে গত বছর কোরবানির ঈদে ‘মানিক’ ও ‘রতন’ নামের দুটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। সে বছর কাঙ্খিত দাম না পেলেও আর্থিক সংকটের কারণে ‘রতন’ নামের ষাড়টিকে বিক্রি করেন। এরপর পরম যত্ন নিয়ে মানিককে পালন করছেন।
প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে হামিদাকে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। তিনি এ বছরও বিশালাকৃতির গরুটি বিক্রি করা নিয়ে দুশ্চিতায় আছেন। পূর্বের বছরের হাটের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ বছর হামিদা বাড়িতে থেকেই গরুটি বিক্রি করার আশা করছেন। দানব আকৃতির ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন লোকজন। তারাও এই নারী উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়ি দেওয়ার আহ্বান জানান।
হামিদা বলেন, এখন তার মানিকের ওজন প্রায় ২ হাজার ৮০ কেজি। দাম চাচ্ছি ১৫ লাখ টাকা। গত বছরের হাটের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে এ বছর হাটে গরু উঠানোর সার্মথ্য নেই। বিশালাকৃতির গরুটি লালন-পালন করতে সব শেষ হয়েছে। এ বছর মানিককে বিক্রি করতে হবে। তাকে রাখার জায়গা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ গরুটির দাম বলেনি ।
হামিদা আরো বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদে মানিককে ঢাকার গাবতলী হাটে তোলা হয়েছিল। গরুটি বিক্রি করতে কয়েকদিন হাটে থেকেছি। কিন্তু দাম পাননি। পানির দামেতো আর গরু বিক্রি করা যাবে না। যদি কেউ দয়া করে গরুটি আমার বাড়ি থেকে কিনে নেন তাহলে নিজে গিয়ে মানিককে ক্রেতার বাড়িতে রেখে আসবো। গরুটি বিক্রি করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া জানান, সাধারণত বড় আকৃতির গরু কেনার সামর্থ্য সবার থাকে না। তাই আমরাও হামিদার ষাঁড়টি বিক্রি করতে অনলাইনে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি অন্য ক্রেতাদেরও খোঁজ-খবর চলছে। যদিও জেলায় বড় গরুর চাহিদা নেই। এছাড়া গত বছর গরুটি বিক্রি করার চেষ্টা করে সম্ভব হয়নি; এবার কি হয় দেখা যাক।