বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আশু জরুরী

বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান আশু জরুরী

ফিচার

সম্পাদকীয় কলাম: গত এক দুর্বিষহ সপ্তাহ পার করল বাংলাদেশ। তীব্র দাবদাহ, বৃষ্টির দেখা ছিল না। এদিকে সরকারের কাছে কয়লা কেনার টাকা নেই। ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। শুরু হল ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং।

তীব্র গা জ্বালা করা গরম, রাত-দিন শান্তি নেই। শহরাঞ্চলে পরিস্থিতি তো ভয়াবহ। লুটপাটে বিদেশে টাকা পাচার করে বেগমপাড়া বানানো হয়েছে, দেশে গাছ খেয়ে ফেলে, নদী-খাল খেয়ে ফেলে, দুর্নীতি বাড়িয়ে, সি-িকেট করে মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে দেশকে নিঃশেষ করা হচ্ছে।

শহরাঞ্চলে গাছ আর নদী খেয়ে ফেলার তীব্র পরিণতি এই গরমে যেন আবার নতুন করে অনুভূত হল। এই তো ক’দিন আগেও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাহেব সড়কের আইল্যান্ড ঠিক করতে গিয়ে নির্বিচারে কয়েকশ গাছ কেটে ফেলেছেন। এত গাছেও তার গাত্রদাহ হচ্ছে, তিনি নিজেই বলছেন, এত গাছ, যেন জঙ্গল।

অথচ একটি শহরে ন্যূনতম যত গাছ দরকার, আমাদের তা নেই। মানে এতটাই নেই যে, ড্রোন শহরের উপরে একটুখানি উঠলেই আমরা দেখি কী নির্মম একটা ইট-কাঠের শহর বানিয়ে ফেলেছি আমরা।

গত কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছে, আমরা বিদ্যুৎ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাইলে বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি। কিন্তু কী দেখা গেল, রপ্তানি তো দূর, এক-দুইটা বিদ্যুৎকেন্দ্র সামান্য অকার্যকর থাকলেই আমাদের বিদ্যুতের ফানুস উবে যায়। দেশে এখন ১৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। সরকারি হিসেবে চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

আর লোডশেডিং করতে হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা বা কেপিআইয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হয়। শিল্পেও যথাসম্ভব কম লোডশেডিং করতে হয়। ফলে সমস্যাটা পড়ছে আবাসিকে। ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাবে ভুগছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা নয় হাজার মেগাওয়াট হলেও দিনে গড়ে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

পাঁচটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে কয়লার অভাবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ। বাকি চারটির মধ্যে তিনটিতে কয়লার সংকট আছে। একটি কেন্দ্রের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহৃত হচ্ছে। ডলারের অভাবে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফা বন্ধ হয়েছিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।

মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। গ্যাসভিত্তিক ৬৪টি কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা পালাক্রমে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। বাকি ৮ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার মধ্যে গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে ৬ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি।

আটটি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এখন তিনটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ফার্নেস তেলচালিত ৬৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির সমস্যায় রয়েছে। তাই উৎপাদনও অনিয়মিত।

সরকার দোষ দিচ্ছেন বৈশ্বিক পরিস্থিতির। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। তা যুদ্ধ হলে তো সারা দুনিয়ায় কয়লা-তেলের সংকট হওয়ার কথা। সংকট হলে বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা। অথচ খবর বলছে, কয়লা, ডিজেলের দাম নাকি উল্টো কমছে। তাহলে? আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যাদের কাছ থেকে কয়লা কেনে, ডিজেল কেনে, তাদের অনেকেরই বিল বকেয়া।

কেবল এখানেই নয়, বিভিন্ন এয়ারলাইনসও নাকি আমাদের কাছে টাকা পায়। কিন্তু এসব টাকা দিচ্ছি না কেন আমরা? হিসাব তো বলছে, আমাদের রিজার্ভ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। তার মানে আমাদের কাছে ডলার আছে।

তাহলে জ্বালানি বিক্রেতাদের টাকা পরিশোধিত হচ্ছে না কেন? কেন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে হল। কেন ফার্নেস তেলচালিত অর্ধেক বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানি পাবে না? কয়লা, জ্বালানি যে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তার হিসাব তো না থাকার কথা নয়। কেন, পায়রা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কয়লার জন্য টনক নড়ে? শেষ খবর হচ্ছে পরবর্তী সপ্তাহে দেশের নানা প্রান্তে বৃষ্টির সাক্ষাতের হলে গরম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে আর লোডশেডিংও নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *