বাসাইল প্রতিনিধি: আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিতব্য বাসাইল পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তিন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণা এখন তুঙ্গে। ভোটাররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কে হবেন তাদের পরবর্তী মেয়র। এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বাসাইল পৌরসভা এলাকা জুড়ে।
জানা যায়, বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন প্রার্থী। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ, উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি এনামুল করিম অটল ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ রাহাত হাসান টিপু। হলফনামা অনুসারে দেখা যায় তারা তিনজনেই ব্যবসায়ী। তবে বর্তমানে কারও নামে কোথাও কোন মামলা নেই।
হলফনামার বিবরণে জানা যায়, আবদুর রহিম আহমেদ স্নাতকোত্তর পাস। বিভিন্ন খাতে তাঁর বছরে আয় ৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি-ফ্ল্যাট-দোকান বা অন্য ভাড়া থেকে আয় হয় ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। কৃষি খাত থেকে আয় ৮৬ হাজার টাকা এবং মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তাঁর নগদ টাকা রয়েছে ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ এবং একটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তাঁর ৭৬৮ শতাংশ কৃষিজমি এবং ১০ শতাংশ অকৃষিজমি রয়েছে। এসব জমি তিনি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন। তাঁর কোনো ঋণ নেই। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা এনামুল করিম অটল স্নাতক পাস। তার বছরে আয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আয় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং কৃষি খাত থেকে আসে ৪০ হাজার টাকা। এনামুল করিমের ২ লাখ টাকা নগদ রয়েছে।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো টাকা জমা নেই। তাঁর ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে; যা উপহার হিসেবে পেয়েছেন। এ ছাড়া পৈত্রিকসূত্রে তিন একর অকৃষিজমি এবং এক একর জমিতে বাড়ি রয়েছে। তাঁর নামে অতীতে ও বর্তমানে কোথাও কোনো মামলা নেই।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী রাহাত হাসান টিপুর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস। তিনি ১৫ ভরি স্বর্ণ উপহার হিসেবে পেয়েছেন। তাঁর নগদ দুই লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ২ হাজার টাকা। তাঁর তাঁর ব্যবসা থেকে বছরে আয় আসে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
তাঁর নিজ নামে সাড়ে চার শতাংশ অকৃষিজমি রয়েছে। তাঁর তিন লাখ টাকার বেশি ঋণ আছে। বর্তমানে তাঁর নামে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। পূর্বে একটি হত্যা মামলা থাকলেও তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ওই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পান।
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাসাইল পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। তখন মেয়র নির্বাচিত হন মজিবুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ মেয়র নির্বাচিত হন।
২০১৩ সাল ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে এনামুল করিম অটল এবং রাহাত হাসান টিপু নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। উভয়ই সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এবার জয়ের জন্য উভয়ই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তিন মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোস্টারে ভরে গেছে পৌর এলাকা। সব জায়গায় চলছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহিম আহমেদ মনে করেন, নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর পৌরসভায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করেছি। তাই দলের সকল নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা আমার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল করিম অটল জানান, উপজেলা বিএনপির সবাই তার সঙ্গে আছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তারপরও খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। এবার ৭০ ভাগ ভোটার তার পক্ষে রয়েছেন। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী রাহাত হাসান টিপু বলেন, গত নির্বাচনে সামান্য ভোটে হেরেছিলাম। ১০ বছর ধরে মাঠে রয়েছি। বাসাইলের জনগণ আমাকে চায়। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমার বিজয় নিশ্চিত।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনি শংকর রায় জানান, আগামী ২১ জুন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনে ভোট গ্রহন করা হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে।
তিনজন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৩৭।
বাসাইলের সচেতনমহল মনে করেন, সকল প্রার্থীদের হলফনামা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের জন্য প্রচার করা উচিত। তা হলে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জানতে পেরে যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিয়ুর রহমান জানান, হলফনামা প্রচারপত্র আকারে প্রচার করা হচ্ছে না। তবে ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। ২১ জুন বাসাইল পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।